মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপসহকারী ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা গতকাল ঢাকায় দিনভর বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশে তার সফরের তৃতীয় ও শেষ দিনে তিনি বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বাংলাদেশের সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে। এসব আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত ইস্যু। রাতেই কার্টিস ঢাকা ত্যাগ করেন। গতকাল সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা কার্টিস। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারকে আমরা চাপ দেব এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে যেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা নিরাপদে এবং স্বেচ্ছায় নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারেন। এসব ব্যাপারে আমাদের ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের ডকুমেন্ট প্রয়োজন। যারা নৃশংসতা চালিয়েছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আর যেন এ রকম নৃশংসতা না হয়। এ জন্য মিয়ানমারের জন্য অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গত ছয় মাসের নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। লিসা কার্টিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যাক। আর রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারই সৃষ্টি করেছে, তাদেরই এর সমাধান বের করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সঠিক সমাধান খুঁজে বের করার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান কার্টিস। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তৃত পরিসরে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতিসহ অনেক ইস্যু রয়েছে। বাংলাদেশ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকালে গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বাসভবনে লিসা কার্টিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা। বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ছিলেন। বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। জানা যায়, লিসা কার্টিস শুক্রবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। ওই দিনই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে সরাসরি কক্সবাজার যান তিনি। সংকটময় পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন লিসা। কক্সবাজার থেকে শনিবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় ফেরেন। এরপর রাজধানীর একটি হোটেলে বৈঠকে বসেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে লিসা কার্টিস আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার কথা জানান। সচিবকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত হওয়ার আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মার্কিন উপদেষ্টাকে বলেন, সরকারও এ ধরনের নির্বাচন চায়। সরকার সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা সংকট সারা বিশ্বেও -শ্রিংলা : ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের সংকট নয়, এটি সারা বিশ্বের সংকট। প্রতিবেশী হিসেবে ভারত এ সংকট উত্তরণে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। গতকাল সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভারত সরকারের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য সারা বিশ্বের অনেক কিছু করার আছে। ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, আগামী বর্ষায় ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কী ধরনের সহযোগিতা ভারত সরকার দিতে পারে তা নিয়ে দেশটির হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের চাহিদার কথা বলেছি। তিনি (শ্রিংলা) দিল্লি গিয়ে তার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে কী দিতে পারেন তা ঠিক করবেন।