বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইউনেস্কোর প্রত্যয়নপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

এখনো আমাদের ৭ মার্চের ভাষণ উজ্জীবিত করে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখনো আমাদের ৭ মার্চের ভাষণ উজ্জীবিত করে

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ এখনো আমাদের উজ্জীবিত করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই ভাষণ আমাদের এখনো উজ্জীবিত করে। তার প্রমাণ, ১৯৭৫ সালের পর এই ভাষণ নিষিদ্ধ করা। তিনি বলেন, কেউ এই ভাষণ বাজাতে চাইলে তাকে নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে এই ভাষণ আবার মানুষের কাছে ফিরে এসেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দানকারী ইউনেস্কোর প্রত্যয়নপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ভাষণের আবেদন এখনো মুছে যায়নি। যখনই এই ভাষণ শুনি, তখনই শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এই ভাষণ এখনো আমাদের জন্য প্রযোজ্য। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যত বিখ্যাত ভাষণ রয়েছে, এর মধ্যে মার্টিন লুথার কিংয়ের ভাষণটি ছাড়া বাকি সবগুলোই লিখিত। এর বাইরে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিই লিখিত নয়। এটি সম্পূর্ণ তার নিজের মনের কথা। ইতিহাসে এমন নজির বিরল।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের ভাষা সংস্কৃতি সবকিছুই আলাদা। অথচ আমাদের শোষণ করা হতো। সামরিক ক্ষেত্রে বাঙালিদের অবস্থানটা কোথায় ছিল? জেনারেল পদে পাকিস্তানি ছিল তিনজন। বাঙালি শূন্য। মেজর জেনারেল পদে পাকিস্তানি ছিল ২০ জন, বাঙালি শূন্য। ব্রিগেডিয়ার পদে ৩৪ জন, বাঙালি শূন্য। নৌবাহিনীতে অফিসার ৩৯৩ জনের মধ্যে বাঙালি সাতজন। বিমান বাহিনীর ৩৪০ জনের মধ্যে মাত্র বাঙালি ৪০ জন ছিলেন। সিভিল প্রশাসনেও কোনো বাঙালি অফিসার ছিল না। পাকিস্তানিদের চোখে বাঙালি মানেই একটি নিকৃষ্ট জাতি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুচারুভাবে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ যখন দিতে যান, তখন অনেক জ্ঞানীগুণী নিজেদের পছন্দের মতো বক্তব্য দিতে বলেন। ছাত্রনেতারাও এসে বলে যান, এই বলতে হবে। এই ঘোষণা দিতেই হবে। তা না হলে চলবে না। আমার মা সব সময় ছায়ার মতো বাবার পাশে ছিলেন। ওই ভাষণটা যেদিন দিতে যাবেন—মা আব্বাকে শয়নকক্ষে নিয়ে যান। আব্বাকে শুধু মা একটি কথাই বলেছিলেন, অনেকে অনেক কথাই বলবে। শুধু সারাজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছ। তুমি জানো কী বললে ভালো হবে। মানুষ তোমার কথাই শুনতে এসেছে, তোমার মনে যা আসবে তাই বলবা। সম্পূর্ণ ভাষণটি ছিল অলিখিত। ওই ভাষণে তিনি সব ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন, ভাষণের পর তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। সে কারণে তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি হুকুম দিতে না পারি’। বাঙালিদের যা যা করণীয় তিনি সে নির্দেশনা দিয়েছিলেন ৭ মার্চের ভাষণে। শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণটি শুধু বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণই না। এটা গোটা বাঙালির মুক্তির পথ। আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ভাষণ। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি দেবেন সে দিকনির্দেশনাও ছিল ভাষণে। এই ভাষণের আবেদন কিন্তু মুছে যায়নি।

সর্বশেষ খবর