বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া উচিত

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেশের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় জড়িত, তাদের ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ দেওয়া উচিত। সন্তানের সাফল্যের প্রত্যাশায় অভিভাবকদের নৈতিকতা বিসর্জন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি শিক্ষা পদকের জন্য মনোনীত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান ও আন্তপ্রাথমিক বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বক্তৃতার একপর্যায়ে লিখিত বক্তব্যের বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সব বাবা, মা-ই চান, তার সন্তান ফার্স্ট-সেকেন্ড হোক, গোল্ডেন-এ প্লাস পাক। কিন্তু যখন শোনা যায় বাবা, মা-ই ছেলেকে নকল সরবরাহ করছেন, তা কী করে সম্ভব! এর চেয়ে লজ্জাজনক-জঘন্য কাজ আর কী হতে পারে! এই বাপ আর মা তার ছেলেমেয়েকে কী শেখাচ্ছেন? ভবিষ্যতে তাকে দিয়ে কী হবে? দেশের কী হবে?

টিউশনি আর কোচিং ব্যবসা প্রসারের জন্য শিক্ষকদের নৈতিকতা বিসর্জন নিয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, যেসব শিক্ষক ছেলেমেয়েদের শেখাবেন, তারা নিজেরাই তার মার্কেট ভালো করার জন্য, প্রাইভেট পড়ানোর মার্কেট ভালো করার জন্য, তিনি যদি প্রশ্ন বলে দেন— ‘এই প্রশ্ন আইতাছে লেখ’। তারা দেশটাকে কী দিচ্ছেন? দেশ ও জাতির স্বার্থে তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া উচিত। রাষ্ট্রপতি তাদের ছাত্রজীবনের সময়কার পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি তুলনা করে বলেন, ‘আমাদের তো বাপ-মা খবরই নিতেন না। স্কুলে গেছেনি? অহন তো পেছনে লাইগা থাকে। লাইগা থাকে ভালা কথা, অসুবিধা নাই। ভালা জিনিস শিখাক। ফার্স্ট-সেকেন্ড হইলে কী হয়? আমি তো খুব খারাপ ছাত্র আছিলাম। আমার মতো খারাপ ছাত্র যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হইতে পারে, তাহলে অত ভালা ছাত্র হওয়ার দরকারটা কী?’ তার এই বক্তব্যের সময় পুরো মিলনায়তন তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়ে।

এমসিকিউ প্রশ্ন পদ্ধতি বদলানোর পক্ষে মত দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন যে টিক মার্ক দিয়া দেয়। এটি বন্ধ রাখা উচিত। এমন পদ্ধতি করা দরকার প্রশ্ন আগেই চলে আসবে। এই প্রশ্ন আইব, এখন তুমি লেখ। সব কোর্স-সিলেবাস মিলাইয়া ২০-২৫টা প্রশ্ন করেন। সব প্রশ্ন ওয়েবসাইটে দিয়া দেন। ২৫টা প্রশ্ন থাকলে পুরো সিলেবাস কাভার করবে। কিন্তু কুনডা আইব হেইডা কইতে পারত না, এই সিস্টেম যদি হয়, তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা লাগবে না।’ এর আগে লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে এবং যে কোনো অন্যায় ও নীতিবিবর্জিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে, সে লক্ষ্যে শিক্ষক অভিভাবকদের উদ্যোগী হতে হবে। মনে রাখবেন, একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার মূল ভিত্তি রচিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করতে পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর তা করতে পারলেই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শেষ হয়ে আসবে।’ শিশুদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে গিয়ে কোনোভাবেই তা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতার রূপ না পায় সেদিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘জীবনের সব ক্ষেত্রে যে কোনো উপায়ে প্রথম হওয়াই সাফল্যের পরিচয় বহন করে না। আজকাল সন্তানদের নিয়ে মায়েরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এর ফলে অনেক সময় শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুরা অন্তর্মুখী হয়ে ওঠে। শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যা।’ তিনি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান এবং অবাঞ্ছিত আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলেন।  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়েরে সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর