বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুগ্ধতা নিয়ে ঢাকা ছাড়লেন ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। তিন দিনের সফরের শেষ দিনে গতকাল সকালে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে অতিথি  প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই সফরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এখানে সামাজিক ন্যায্যতাও সৃষ্টি হয়েছে। চলমান অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেটাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আশা করি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং ডিজিটাল সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অংশীদার হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকালে ঢাকা ত্যাগ করেন সস্ত্রীক সফরে আসা ত্রান দাই কুয়াং। সফরের শেষ দিন সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকার ভিয়েতনাম দূতাবাস, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) ও ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে আয়োজিত ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-আগামীতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে এবং চলতি বছর বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। ২০২০ সাল নাগাদ এই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং বাংলাদেশের অগ্রসরমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে এ দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইটি), চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, অবকাঠামো ও পর্যটনসহ সম্ভাবনাময় খাতে ভিয়েতনামের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ত্রান দাই কুয়াং ভিয়েতনামের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন বলেও উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাম বিন মিন এবং পরিকল্পনা ও বিনিয়োগমন্ত্রী গুয়েন চিন ডাং, ঢাকার এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ভিয়েতনামের ৫০ শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়। ‘সি ফুড’ এবং ‘লেদার ও ফুটওয়্যার’ এই দুই খাতে পৃথকভাবে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতার আওতায় বাংলাদেশ থেকে এসব খাতে পণ্য রপ্তানি এবং ভিয়েতনামের কারিগরি সহায়তা সম্প্রসারণ করা হবে। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম দুই দেশই আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রাম অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এ ছাড়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) রয়েছে। কর অবকাশসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেওয়াসহ নানা বিনিয়োগ সুবিধা থাকছে। তিনি সরকারের দেওয়া আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ অথবা এর বাইরে বিভিন্ন খাতে ভিয়েতনাম বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় এ পর্বে ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গুয়েন চিন ডাং এবং শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী চাও কুয়োক হাং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে গত রবিবার ঢাকা সফরে আসা ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট গতকাল বিকাল ৩টায় বিশেষ বিমানে হ্যানয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। গত ১৪ বছরে প্রথমবারের মতো সফরে আসা ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে রোহিঙ্গা সংকটসহ আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তার আশ্বাস দেন।

সর্বশেষ খবর