বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিলম্বে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অনির্বাচিত সংসদ বহাল রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে সব রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, অন্যথায় সরকার যে ষড়যন্ত্র করছে এর ফলে দেশ অকার্যকর হয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিনি জনপ্রিয় লেখক ও বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত বলে উল্লেখ করেন। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে গতকাল এ কর্মসূচি পালিত হয়। বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি শুরুর কথা থাকলেও নেতা-কর্মীরা সময়ের আগেই উপস্থিত হওয়ায় এই প্রথমবারের মতো এর আধঘণ্টা আগেই এ কর্মসূচি শুরু করে দলটি। কর্মসূচির শেষ মুহূর্তে বেলা ১২টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিতর থেকে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা ধরে নিয়ে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এরও কিছু সময় আগে প্রেস ক্লাব ও আশপাশের এলাকা থেকে আরও ছয়জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

কারাগারে খালেদার সঙ্গে আজ দেখা করবেন বিএনপি নেতারা : কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। আজ বুধবার বিকাল ৩টায় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে যাবেন তারা।

 খায়রুল কবির খোকন, বজলুল বাছিদ আনজু, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ ও ছাত্রদলের আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ। ২০-দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির একাংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুত্ফর রহমান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন আবদুল আউয়াল মিন্টু, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আতাউর রহমান ঢালী, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, কবির মুরাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, আফরোজা আব্বাস, কামরুজ্জামান রতন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুল আউয়াল খান, সাইফুল আলম নীরব, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মীর সরাফত আলী সপু, কাদের গনি চৌধুরী, আবদুল মতিন, শেখ রবিউল আলম, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মফিকুল হাসান তৃৃপ্তি, নিপুণ রায় চৌধুরী, রফিক শিকদার, কাজী আবুল বাশার, মোরতাজুল করিম বাদরু, মামুন হাসানসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। এ ছাড়া এলডিপির শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি, ন্যাপ-ভাসানীর মহাসচিব গোলাম মোস্তফা প্রমুখ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে নতজানু করতে চায়। এ সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার চক্রান্ত করছে। এ জন্য ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ী ও চিহ্নিতদের গ্রেফতার না করে, কোনো ধরনের তদন্ত না করে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে সরকার জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তিনি বলেন, ড. জাফর ইকবালকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করা হলো। আর কোনো তদন্ত না করেই বলে দেওয়া হলো বিএনপি এর জন্য দায়ী। অথচ দেখা যাচ্ছে, যাদের আটক করা হয়েছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ কি শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশকে অকার্যকর ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়? একটি নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছে এ সরকার!

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দী আছেন। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা শেষ। প্রশ্ন ফাঁস এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ব্যাংকগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার মাসে আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। দেশের সেই স্বাধীনতাকে আজ বিপন্ন করে ফেলা হচ্ছে। এই সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে সবার জন্য নির্বাচনে সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার দেশনেত্রীর কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করতে চায়, যাতে আগামী একাদশ নির্বাচনে দেশনেত্রী ও বিএনপিকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন করতে পারে। দেশনেত্রী ও ২০ দল ছাড়া দেশে কোনোভাবেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। দেশনেত্রীকে বাইরে রেখে যারা নির্বাচন করতে চান, তারা দুঃস্বপ্নে আছেন। ইনশা আল্লাহ আমরা নেত্রীকে নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে অংশ নেব।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকারকে বলব, যত বিলম্ব করার চেষ্টা করুন না কেন, যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, যত ছলচাতুরী করুন না কেন, ইনশা আল্লাহ বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসবেনই। সেটি আর বেশি দূরে নয়, আদালতের মাধ্যমেই তা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারকে বাধ্য করা হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে। নির্বাচনের ৯০ দিন আগে অবশ্যই সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আগামীতে একটি পাতানো নির্বাচন করতে চায়। জনগণকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সরকারকে বলছি, অনেক ভুল করেছেন, সবকিছুর একদিন জবাব দিতে হবে। এভাবে বেশি দিন টিকে থাকা যাবে না। মনে রাখবেন, এক মাঘে শীত যায় না। মনে রাখবেন, এ দেশের মানুষ একবার আঘাতপ্রাপ্ত হলে তা ভুলে যায় না। দয়া করে অস্থির হবেন না। দেশের মানুষকে স্বস্তি দিন। বিরোধী দলকে আর কষ্ট দিয়েন না।’

প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে সচিবালয়ের মোড় থেকে পশ্চিমে কদম ফোয়ারা মোড় পর্যন্ত কয়েক লাইনে বিভক্ত হয়ে নেতা-কর্মীরা সারিবদ্ধভাবে মানববন্ধনে দাঁড়ান। তবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নির্ধারিত সময়ের আগেই সকাল ১০টা থেকে মানববন্ধনে দলটির নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হন। ‘বন্দী আছেন আমার মা, ঘরে ফিরে যাব না’, ‘হামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘জেল জুলুম টিয়ার গ্যাস, জবাব দেবে বাংলাদেশ’—উপস্থিত নেতা-কর্মীদের এসব স্লোগানে প্রেস ক্লাব এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

সর্বশেষ খবর