সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুলিশ-পোশাক শ্রমিক সংঘর্ষ গুলি-লাঠিচার্জ আহত ২৫

গাজীপুর প্রতিনিধি

কালিয়াকৈরের মৌচাকে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা ও গাড়ি ভাঙচুর এবং সড়ক অবরোধ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ১১ রাউন্ড শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পুলিশের ইন্সপেক্টর ও এসআইসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সহিদউল্লাহ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকের কৌচাকুড়ি তেলিরচালা এলাকার এটিএস অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরে তাদের বেতন-ভাতা প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধের দা বি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতি মাসেই ওই সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করে বিলম্বে পরিশোধ করে। গত কয়েক দিন আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা চলতি মার্চ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতাসহ পাওনা বকেয়াদি চলতি মার্চ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে শনিবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে। বৈঠকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতা আগামী বুধবার পরিশোধের ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরদিন গতকাল সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তারা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওই দাবি মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার গেট তালাবদ্ধ করে কারখানার ভিতরে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালার কাচ ও মেশিনপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা কারখানার সিকিউরিটি কক্ষে অবস্থানরত কয়েক কর্মচারীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানার ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সহিদউল্লাহ, এসআই সাইফুল ইসলাম, কনস্টেবল মাহমুদাসহ পুলিশের ৭ সদস্য আহত হন। উত্তেজিত কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় অন্তত ১৮ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রেরণ করা হয়। এদের মধ্যে শটগানের গুলিতে আহত সুমি ও আক্তার বানু এবং লাঠির আঘাতে আহত মাহমুদাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশ গাজীপুর-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, উত্তেজিত শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের ৭ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৮ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করেছে। এ ব্যাপারে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, এ কারখানায় প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। প্রতি মাসেই শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করা হয়। তবে গত মাসের পাওনাদি চলতি মাসে পরিশোধ করতে ৩-৪ িদন বিলম্ব হওয়ায় কিছু শ্রমিক সংগঠনের উসকানিতে তাদের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

সর্বশেষ খবর