শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফিরল সর্বশেষ তিন লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বাকি তিন বাংলাদেশির লাশ দেশে আনা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে লাশগুলো। এরপর পৃথক অ্যাম্বুলেন্সে বিমানবন্দর থেকে আলিফুজ্জামানের লাশ খুলনায়, নজরুলের লাশ রাজশাহী ও পিয়াসের লাশ বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়। আগ থেকেই তাদের লাশ গ্রহণ করতে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হেংগার গেটে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। এর আগে দুপুর দেড়টায় নেপাল থেকে লাশবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি ছাড়ার কথা থাকলেও তা দুই ঘণ্টা পরে ছাড়ে। বিমানে লাশ উঠানোর আগে সকাল ৯টার দিকে নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সোমবার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২৩ জনের লাশ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। ডিএনএ টেস্ট প্রোফাইল মেলাতে তিনজনের লাশ পৌঁছানো বাকি ছিল।  গতকাল লাশগুলো পৌঁছালে তা গ্রহণ করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল। পরে তিনি ডেথ সার্টিফিকেটসহ লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে গিয়ে কান্না আর ধরে রাখতে পারেননি মন্ত্রী। দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। এরপর চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত শোকাহত। ইউএস-বাংলার যে প্লেনটার দুর্ঘটনা ঘটেছে— এর জন্য গোটা জাতি আজ শোকাহত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি নিজেই কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলাম। যারা আহত হয়েছিল, তাদেরকে আমি বিভিন্ন হাসপাতালে দেখে এসেছি। তাদের দুজনকে সিঙ্গাপুরে, একজনকে ভারতে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। ঢাকায় সাতজন চিকিৎসাধীন। তিনি নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।  শাহজাহান কামাল বলেন, এত বড় দুর্ঘটনা অতীতে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। আহত এবং নিহতদের পরিবার অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবেন। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশের পুরো এভিয়েশন সেক্টরকে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্ঘটনায় তদন্ত চলছে। এসময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. নাঈম হাসান, ইউএস-বাংলার সিইও ইমরান আসিফসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। লাশ হস্তান্তরের সময় উপস্থিত পিয়াস রায়ের সহপাঠী শারমিন রহমান জানান, পিয়াস ছিল অত্যন্ত মেধাবী। তার লক্ষ্য ছিল অনেক উচ্চতায় যাওয়ার। প্রায়ই সে ভ্রমণে যেত। এটা তার নেশা ছিল।   বেদনা ভারাক্রান্ত আলিফুজ্জামানের ছোট ভাই ইয়াসিন আরাফাত জানান, তার ভাই পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা করতেন। তার দানের হাতও ছিল অনেক লম্বা। তিনি অনেক জায়গায় বেড়াতে যেতেন, যাওয়ার আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিতেন। এবারই প্রথম যাওয়ার আগে তিনি ‘বাই বাই খুলনা’ বলে পোস্ট করেন। আমরা কখনই ভাবিনি যে, এটাই তার চিরতরে বিদায়।

এদিকে প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের লাশ নিতে আসেন তার দুই কন্যা নাজনীন আক্তার কাকন ও নারগিস আক্তার কনক। সোমবারও তারা তাদের মায়ের লাশ নিতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই দুই বোন সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বাবা-মা তাদের মাথার ওপর সার্বক্ষণিক ছাতার মতো ছিলেন। অসময়ে একসঙ্গে দুজনের বিয়োগ তারা মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনায় তারা বড় অসহায় ও একা হয়ে পড়েছেন। 

এর আগে ২৩ জনের লাশ দেশে আনা হয়। তারা হলেন— আঁখি মণি, বেগম নুরুন্নাহার, নাজিয়া আফরিন, এফ এইচ প্রিয়ক, উম্মে সালমা, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, রকিবুল হাসান, হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মতিউর রহমান, মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক উজ জামান, পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, কেবিন ক্রু খাজা সাইফুল্লাহ, কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলা, ফয়সাল, সানজিদা ও নুরুজ্জামান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর