বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

অর্থ পাচার ঠেকাতে কঠোর থাকবে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ পাচার ঠেকাতে কঠোর থাকবে দুদক

জনগণের অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমন মন্তব্য করেছেন কমিশন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী, বিএনসিসির সদস্য, গার্লস গাইড, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন শেষে এসব কথা বলেন। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করে সর্বস্তরের মানুষকে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা। ‘বন্ধ হলে দুর্নীতি, উন্নয়নে আসবে গতি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ-২০১৮’-এর তৃতীয় দিনে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে কমিশনের কর্মীরা দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. জাফর ইকবাল, মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মঈদুল ইসলাম, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মো. জয়নুল বারী, মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. আতিকুর রহমান খান, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী প্রমুখ। ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা প্রশংসাযোগ্য। তবে দুর্নীতির মাত্রা যদি কম হতো তাহলে অবশ্যই আরও বেশি অগ্রগতি হতো। তিনি বলেন, উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে দুর্নীতিকে সম্মিলিতভাবে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু দুদকের একার পক্ষে প্রত্যাশিত মাত্রায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ কিংবা সমাজে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা পরিপূর্ণভাবে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থনের কোনো বিকল্প নেই। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কিছু দুর্নীতিবাজ এ দেশের জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করছে। এ বছর অর্থ পাচার রোধ করতে দুদক সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। কমিশন বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য পাচ্ছে যে, কিছু দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী, গুটিকয় সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানির নামে দেশ থেকে জনগণের অর্থ পাচার হচ্ছে। জনগণের অর্থ বিদেশে পাচার রুখতে দুদক শক্তভাবে আইনি ব্যবস্থা নেবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা সরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থায় দুর্নীতিবাজ হিসেবে জনশ্রুতি আছে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে দুদক। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক ‘শূন্যসহিষ্ণু’ নীতি অবলম্বন করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। অন্য প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে সরকার ইতিবাচক বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কমিশন সার্বিক বিষয়ের ওপর নজর রাখছে। অসাধু ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা কথিত কোচিং সেন্টার পরিচালনাকারীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ এই ঘৃণ্য এবং অমার্জনীয় অপরাধে কেউই জড়াবেন না। এই অপরাধীদের কোনো ক্ষমা নেই। এ দেশে জন্ম নিয়ে মাটি, পানি, জলবায়ুতে বড় হয়ে, এ দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দেশদ্রোহী হবেন না। বিদেশে বসে এই সম্পত্তি ভোগ করতে পারবেন না। দুদক ইতিমধ্যেই ৩২ জনের অর্থ পাচারের বিষয়ে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে। তাদের আমলনামা পেতে সময় লাগবে। অর্থ পাচার বন্ধে মূল দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের। কারণ ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে এ দুটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিকালে দুদক কার্যালয়ে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিবেদনের জন্য তিন ক্যাটাগরিতে ছয়জনকে দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

সর্বশেষ খবর