শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

নৌকায় ভোট দিন সোনার বাংলা দেব

ঠাকুরগাঁওয়ের বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি ও আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও থেকে

নৌকায় ভোট দিন সোনার বাংলা দেব

ঠাকুরগাঁও জেলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গতকাল বিশাল জনসভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য স্বাধীনতার পক্ষশক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে হয়। তিনি দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়ে বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আপনাদের সোনার বাংলাদেশ উপহার দেব।’ গতকাল বিকালে ঠাকুরগাঁও জেলা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঠাকুরগাঁও সফরে এসে ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। বিএনপি এলে হয় না। কারণ আর কিছুই না, বিএনপির সঙ্গী যুদ্ধাপরাধী, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। তাই তারা এ দেশের উন্নতি চায় না, ভালো করতে চায় না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানেই দেশ ধ্বংস হওয়া, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, দুর্নীতি-লুটপাট করা। সন্ত্রাস করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা। আর আওয়ামী লীগ আসা মানে উন্নয়ন, শান্তি, দেশের উন্নতি, কর্মসংস্থান, মানুষের উন্নত জীবন।’ স্থানীয়ভাবে বড় মাঠ নামে পরিচিত এই মাঠে স্থানসংকুলান না হওয়ায় পাশের রাস্তা এবং শহরের বিভিন্ন মোড়ে স্থাপিত ১৫০টি মাইকের নিচে জটলা পাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনে জনতা। সাড়ে ১৭ বছর পর শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও আসায় জনসভায় অনেকেই এসেছিলেন তাঁকে একনজর দেখতে। ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে এত বড় জনসভা সেখানে হয়নি। জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল। সমাবেশে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সরকারে এসেছি। সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজ উন্নয়নের ছোঁয়া প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছে। এ উন্নয়নের ধারাবহিকতা বজায় রাখার জন্য নৌকা মার্কায় আপনাদের কাছে আমি ভোট চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের একজন মানুষও ঘরহারা থাকবে না। যারা ভূমিহীন তাদের মাঝে আমরা খাসজমি বিতরণ করছি। যাদের ঘর নেই বাড়ি নেই, জমি নেই, জাতির পিতা তাদের জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প নিয়েছিলেন। গুচ্ছগ্রামের আদলে আমি নিয়েছি আশ্রয়ণ প্রকল্প। যদি কেউ ঘরহারা থাকেন আমরা তাকে ঘর করে দেব বিনা পয়সায়। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষকে উপহার দেয় লাশ। আর আওয়ামী লীগ এলে মানুষ পায় উন্নতি। দারিদ্র্য থেকে পায় মুক্তি। তিনি বলেন, ‘বিএনপির আমলে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ ভাগ। বর্তমানে তা কমিয়ে ২২ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশকে আমরা সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব এ বিশ্বাস আমার আছে।’

‘আমার কাছে দাবি করার প্রয়োজন নেই, পুরো বাংলাদেশ আমি চিনি’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের কোথায় কী প্রয়োজন, বাংলাদেশের কী উন্নয়ন করতে হবে আমি জানি। ক্ষমতাকে আমরা ভোগের জিনিস মনে করি না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনে করি আমি আপনাদের সেবক।’ তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপকভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঠাকুরগাঁওয়ে যাতে একটা বিশ্ববিদ্যালয় হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবস্থা আমরা করে দেব। এ ছাড়া জেলায় আইটি পার্ক, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা পর্যন্ত আন্তনগর রেললাইন, প্রতি উপজেলায় একটি মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার করে দেব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিতা-মাতা, ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। আমার পিতা দেশের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার জীবনে স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ উন্নত হবে।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমরা উন্নয়নের একটা ধাপ পেরিয়েছি। এ মাসে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। উন্নয়নের এ ধারা এগিয়ে নিতে চাই।’

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সম্পদের অভাব নেই, প্রচুর টাকা রয়েছে দেশে-বিদেশে। ১৯৯১ সালে বিদেশ থেকে এতিমের জন্য টাকা এসেছে। একটা টাকাও তারা এতিমের হাতে তুলে দেয়নি। সব টাকা আত্মসাৎ করেছে। মামালা দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কোর্ট রায় দিয়েছে। তার জন্য আবার আন্দোলন করতে চান তারা। যে এতিমের টাকা চুরি করে তার জন্য আবার আন্দোলন কীসের?’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজ জেলার জনসভায় তার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফখরুল ইসলামের দিনরাত কথা বলতে বলতে গলা ফুলে যায়। বার বার গলার চিকিৎসা করতে হয়। মিথ্যা কথা বলার একটা সীমা আছে। সারা দিন মিথ্যা বললে তো আল্লাহও নারাজ হন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি ছিলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী। বিমানের কী উন্নয়নটা তিনি করেছিলেন? বিমান নেই। টাকাপয়সা সব লুটপাট। রাডার স্টেশন নষ্ট। সবকিছু ধ্বংস করে রেখে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আটটি আন্তর্জাতিকমানের বিমান কেনা হয়েছে। সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বিএনপি আমলে। আমরা সরকারে এসে সেই এয়ারপোর্ট চালু করে দিয়েছি। এরা মানুষকে দিতে জানে না। শুধু বিমান ধ্বংস নয়, দেশটাকেই তারা ধ্বংস করে দিয়েছিল।’ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বি এম মোজাম্মেল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, রোকেয়া সুলতানা, রমেশ চন্দ্র সেন, মহিলা লীগের সাফিয়া খাতুন, যুব মহিলা লীগের অপু উকিল, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদেক কোরেশী।

সর্বশেষ খবর