শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বড় ঋণ খেলাপিদের তথ্য ছাপা হবে পত্রিকায়

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি আদায়ে হচ্ছে পৃথক সেল

মানিক মুনতাসির

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে পৃথক সেল গঠন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বড় অঙ্কের ঋণখেলাপিদের তথ্য প্রকাশ করা হবে সংবাদপত্রে। এ জন্য এসব ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকার ওপরে ঋণগ্রহীতাদের  বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে তৃতীয় কোনো পক্ষকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ ছাড়া এ সংক্রান্ত চলমান মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ২১ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রস্তাবনায় এসব সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি ‘ভালো কাজে পুরস্কার এবং মন্দ কাজে শাস্তি’ এ বিধান প্রবর্তনসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণের মূল কারণ ‘লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপট (এলটিআর)’ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়’ শীর্ষক বৈঠকেও এসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ, ঋণ আদায় এবং নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পদায়ন বিষয়ক ২২টি সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঋণ বিতরণ ও আদায়ের কাজে সংশ্লিষ্টদের ভালো ঋণ বিতরণ ও মন্দ ঋণ আদায়ের জন্য প্রণোদনা প্রদান এবং মন্দ ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে বড় খেলাপিদের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি ও পদায়ন বিষয়ে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইওদের টার্গেট দেওয়া, মূল্যায়ন করা এবং সে অনুযায়ী বোনাস, ইনসেনটিভ প্রদানসহ তাদের নিয়োগ বহাল রাখা বা মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি টার্গেট পূরণ সাপেক্ষে বিবেচনার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর প্রায় অধিকাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের পৃথক সেল গঠনের সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের আরও সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রস্তাবগুলো অধিক যাচাই-বাছাই করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর