শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের আগে জোটের সমস্যা

এলাকায় নেই তবুও চাওয়া ধানের শীষের মনোনয়ন

একলা চল নীতিতে জামায়াত

মাহমুদ আজহার

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে মাঠে দেখা যায়নি ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের। কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের মাঝেমধ্যে বিএনপির কর্মসূচিতে দেখা গেলেও কর্মীদের হদিস পাওয়া যায় না। তারাই এখন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির কাছে আসন ভাগাভাগি চায়। এ ব্যাপারে চাপও দেওয়া হচ্ছে বিএনপিকে। তাদের বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্তিই এখন মুখ্য বিষয়। কিন্তু তা মানতে সম্মত নয় জোটের শরিক দলগুলো।

জানা গেছে, জামায়াত আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুলনা ও গাজীপুরে মেয়র    পদে প্রার্থী দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরে তারা প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেয়। প্রয়োজনে তারা একলা চল নীতিতেই থাকবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটি স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুই মাস ধরে কারাগারে বন্দী। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। বেগম জিয়াকে মাইনাস করে নির্বাচনের ষড়যন্ত্র চলছে। ঠিক এই মুহূর্তে জোটের শরিক দলগুলো আসন ভাগাভাগি চায়। এটা একধরনের সুযোগ বুঝে ফায়দা নেওয়ার মতো। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা জোটের অবদানকে ছোট করে দেখি না। কিন্তু সবকিছুরই একটা সময় আছে। এখনই একাদশ নির্বাচনের আসন নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করতে হবে? বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপির একাংশ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি (একাংশ), বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই ১০টি দলের। অধিকাংশ দলই নাম ও প্যাডস্বর্বস্ব। জানা যায়, বিএনপি জোটে এক নেতার এক দলই বেশি। নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্য দূরে থাক, কোনো কোনো দলের নেতাদের ওয়ার্ড কমিশনার হওয়ার যোগ্যতাও নেই। তবুও তাদের আবদারের শেষ নেই। বিএনপির কাছে জোটের শরিক দলগুলো চায় অন্তত ১০০ আসন। গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এলডিপির ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার সম্মেলনে জোটের শরিক নেতারা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে এখনই ফয়সালর দাবি তোলেন। ওই সম্মেলনে জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত থাকলেও মূল দল বিএনপির কেউ ছিলেন না। এলডিপির সম্মেলনে দলটি বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এপ্রিলের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সমঝোতা চায়। তা না হলে ৩০০ আসনে ৬০০ প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এলডিপি। দলটির সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘যারা যোগ্য, তাদের কাজ করতে বলেছি। আশা করি, বিএনপি, এলডিপি সভাপতিসহ নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন নিশ্চিত করবে।’ দশম সংসদ নির্বাচনে এলডিপি অংশ নিলে ১০টি আসন, দুজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দেওয়ার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছিল বলেও দাবি করেন তিনি। জানা যায়, জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল জামায়াত বিএনপির কাছে প্রায় অর্ধশত আসন চেয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপিকে নানাভাবে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয়নি। এ ব্যাপারে তারাও বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান চায় বলে জানা গেছে।

জোটে নতুন অন্তর্ভুক্ত জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। এখনো নিবন্ধন হয়নি দলটির। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন জানালেন, তাদের দলে ১৩ জন সাবেক এমপি রয়েছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে ৫০ জনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে এখন তাদের মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন বলে জানা গেছে। জোটের শরিক সাম্যবাদী দল। নিবন্ধন-সংগঠন কোনোটিই নেই। বলা যায়, এক নেতার এক দল। নেতৃত্বে কমরেড সাইদ আহমেদ। তিনি জানালেন, জোটবদ্ধ নির্বাচনে অন্তত ৭টি আসন চাইবেন বিএনপির কাছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে লড়তে চান তিনি। ডেমোক্রেটিক লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে লড়তে বিএনপির কাছে ২টি আসন চাইবে। ময়মনসিংহ-৮ আসনে (ঈশ্বরগঞ্জ) লড়তে চান দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মণি। খণ্ডবিখণ্ড বাংলাদেশ লেবার পাটির দুই অংশই নির্বাচনে যেতে চায়। এর মধ্যে পিরোজপুর-২ আসনে (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-জিয়ানগর) প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। জোটের অন্য শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ। এ সংগঠনটির ৪০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এখন মূল লক্ষ্য চেয়ারপারসনের মুক্তি। তিনি মুক্তি পেলে তাঁর নেতৃত্বেই বিএনপি জোট একাদশ নির্বাচনে যাবে। তাই এখনই আসন নিয়ে আমরা কিছু ভাবছি না। সময়মতো তা জানানো হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর