শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

এক মামলায় খালেদার জামিন হলেও মুক্তি মিলছে না

বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মে আব্বাসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে আদালত। একই সঙ্গে এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও ওই দিন পর্যন্ত মুলতবি করেছেন বিচারক। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় থাকায় কারাগার থেকে এখনই তার মুক্তি মিলছে না।

এদিকে পরিত্যক্ত সরকারি ১৮টি বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে চারদলীয় জোট সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।

গতকাল চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে না পারায় বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুনানি পিছিয়ে দেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার হাজিরা নেওয়া যেতে পারে— এমন বিষয় শুনানিতে উপস্থাপন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তবে এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি আদালত। সর্বশেষ ১৩ মার্চ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট

 মামলার অন্যতম আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক হয়। সেদিন বিচারক ২৮ ও ২৯ মার্চ শুনানির নতুন তারিখ রেখে নির্ধারিত দিনে খালেদা জিয়াকে হাজিরের নির্দেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাজির করতে না পারায় মামলার শুনানি ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। গতকাল মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে উঠলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আমি জেনেছি বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি বাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন। মেডিকেল বোর্ড ওনাকে চিকিৎসা দিয়েছে। কিন্তু উনি এ চিকিৎসা না নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নেবেন বলে জানিয়েছেন। সেটা প্রক্রিয়াধীন।’ মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজির করে আদালতের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী সে সুযোগ রয়েছে।’ এভাবে ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের দুটি মামলা পরিচালনার উদাহরণও আদালতের সামনে তুল ধরেন দুদকের আইনজীবী। তিনি বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের কাজ চালিয়ে যাওয়ার আবেদনটি তারা করবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান এ সময় কাজলের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এই আদালত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চলে। আদালত কীভাবে চলবে সে জন্য আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ প্রয়োজন। দুদকের আইনজীবীর বক্তব্যের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী রেজাক খান বলেন, ‘এমন সাবমিশন গ্রহণ হতে পারে না। ভিডিও কনফারেন্স, এটা-সেটা, এত বাড়াবাড়ি করার কউ আছে!’ দুদকের আইনজীবী কাজল এ সময় বলেন, ‘তিনি গুরুতর অসুস্থ নন। আমার কাছে তথ্য আছে, মেডিকেল বোর্ড তাকে ওষুধ দিয়েছে, তিনি বাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তিনি ওষুধ খাচ্ছেন না।’

আব্বাসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলতে বাধা নেই : পরিত্যক্ত সরকারি ১৮টি বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের করা মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল এ-সংক্রান্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এ আদেশের ফলে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।

আদালতে রাজউকের তৎকালীন অফিসার কাজী রিয়াজুল মনিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আদেশের পর খুরশীদ আলম খান জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলাগুলো করা হয়। বিচারিক আদালতে মামলাগুলো সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু হাই কোর্টের রুলসহ স্থগিতাদেশ থাকায় বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এই রুল খারিজ করে দেওয়ায় মামলা চলতে কোনো বাধা থাকল না।

উল্লেখ্য, সরকারি ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি নিয়ে সাজানো দরপত্র ডেকে অস্বাভাবিক কম দামে বিক্রির অভিযোগে ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক। ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাজানো দরপত্রের মাধ্যমে ও প্রকৃত দামের চেয়ে কম দাম দেখিয়ে ১৮টি সরকারি বাড়ি বিক্রি করে আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ওই অভিযোগপত্রে মির্জা আব্বাস ছাড়াও আরও ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সুবিধা আদায়ের বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর