মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন মডেল হবে ফারমার্স ব্যাংক

—মো. এহসান খসরু, এমপি

আলী রিয়াজ

নতুন মডেল হবে ফারমার্স ব্যাংক

সরকারি, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে ব্যাংকিং পদ্ধতির নতুন মডেল হবে ফারমার্স ব্যাংক। এই প্রতিষ্ঠান হবে সেমি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। পুরো বেসরকারি খাতের মধ্যে গ্রাহক আস্থার শীর্ষ অবস্থান হবে আমাদের ব্যাংকের। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আইসিবির এই ব্যাংকে বিনিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এক মাসের মধ্যে সব সংকট কাটিয়ে নতুনরূপে কার্যক্রম শুরু হবে। ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের মুখোমুখি হয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরু এসব কথা বলেন। সম্প্রতি গুলশানে নিজ কার্যালয়ে তিনি দেশের বিনিয়োগ, ব্যাংক খাত, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

এহসান খসরু বলেন, ব্যাংকিং খাতে সংকট আমাদের শুরু থেকেই ছিল। বাংলাদেশে ব্যাংকিং শুরুর সময় যে খেলাপি ছিল, তা রিকভার করা যায়নি। এর ফলে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছে আমাদের। পরবর্তী সময়ে আমাদের আর্থিক কাঠামো যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু আইনি সামঞ্জস্য বা কারিগরি প্রযুক্তি ও জবাবদিহি সঠিকভাবে বাড়েনি। ব্যাংক কীভাবে চলবে, কারা পর্ষদ সভায় আসবেন, তা কখনো নীতিমালার আওতায় আসেনি। তিনি বলেন, সত্তরের দশকের পর যখন বেসরকারি খাতে ব্যাংক সৃষ্টি হয়, তখনো কোনো নীতিমালা করা হয়নি। ফলে ব্যাংকের নেতৃত্বে যারা এসেছেন, তাদের অনেকের অভিজ্ঞতা ছিল না। এ জন্য রুগ্ণ ব্যাংকের সৃষ্টি হয়েছে। এর সুবিধা নিয়েছেন কিছু মন্দ ব্যাংকার। ব্যাংকারদের কথায় পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে অনিয়ম হয়েছে, অপব্যাংকিং হয়েছে। তবে অনিয়ম যেটুকু হয়েছে, দেশে ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের তুলনায় তা খুবই কম। আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশের মতো। এর মধ্যে ফেরত আসবে না এর পরিমাণ ১/২ শতাংশের বেশি নয়। এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় কোনো সংকট নয়। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম অত্যন্ত শক্তিশালী। ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে এখন সব ব্যাংককে পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এর সুফল খুব দ্রুত পাওয়া যাবে। এখন চাইলেই কোনো অনিয়ম করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল কাজ মনিটারি পলিসি নিয়ন্ত্রণ করা। এ কারণে সার্বিক জবাবদিহির জন্য ব্যাংকিং কমিশন দ্রুত করা প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক দেশেই এটা আছে। এ ছাড়া কিছু আইনগত সংস্কার দরকার। অনেক ঋণখেলাপি আদালতে গিয়ে রিট করেন। প্রত্যেকের আদালতে যাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতিতে এটা একতরফা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকারদেরও কিছুটা দুর্বলতা আছে। ফারমার্স ব্যাংকের এমডি বলেন, আমাদের ব্যাংকে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা অভিজ্ঞতার অভাবে। এখন নতুন পর্ষদ গঠন হবে। আমাদের পর্ষদে প্রাতিষ্ঠানিক ও কৌশলগত পরিবর্তনের আদলে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যার সুফল ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে এবং স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। ব্যাংকটিকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকার দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি উত্তোলন করা হবে। এগুলো অতিসত্বর বিক্রির অফার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, একটি ব্যাংকের মূল চালিকাশক্তি ওই ব্যাংকের গ্রাহক। আমরা গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ব্যাংকের অর্থ সংকট কাটাতে ফান্ড টিম এবং আমানতকারী ও গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে রিকভারি টিম নামে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তারা প্রতিদিন টাকা আনছে। আমরা আমাদের খেলাপি গ্রাহকদের তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। এর একটি হচ্ছে, যারা ইচ্ছা করে দূরত্ব বজায় রাখছেন, দ্বিতীয়টি যারা ফান্ড ডাইভার্ট করেছেন টাকা ফেরত দেবেন না বলে এবং যারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের মনোভাবের ওপর বিবেচনা করে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমি নিজে বিভিন্ন শাখায় গিয়ে আমানতকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে যে ব্যাংকে রাখা টাকা তারা ফেরত পাবেন কি না। কিন্তু এখন পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। সবার মধ্যে আস্থা ফিরেছে। এহসান খসরু বলেন, ব্যাংকের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ারহোল্ডারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পরিচালনার দায়িত্ব। আর্থিক খাতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের বর্তমানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান, ইসি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের সবাই ক্রেডিট, ব্যাংকিং ক্যাপিটাল স্ট্রাটেজি, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং খাতে অভিজ্ঞ। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকের পরিচালনা ব্যক্তিমুখিতা থেকে ঘুরিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকমুখী করতে হবে। আর তা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্ব বাড়ানো মাধ্যমেই সম্ভব। সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকের মূলধনের পাশাপাশি সুশাসন জোরদার করা হচ্ছে। এই মডেলে ফারমার্স ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ালে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে গুড গভর্ন্যান্সের এক নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হবে।

সর্বশেষ খবর