শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুই সিটিতে জোয়ার সৃষ্টি করতে চায় আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য এই দুই সিটিতে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে চায় তারা। আর এই গণজোয়ার ধরে রেখেই জাতীয় নির্বাচনে হ্যাটট্রিক বিজয় নিশ্চিত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে দলটি। আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। এ দুটি সিটিতেই এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। 

দলীয় সূত্র মতে, দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে একাধিকবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। আর সাধারণ সম্পাদক দুই সিটিতে দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে কমিটিও করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে এলাকা ও থানাভিত্তিক কমিটি করে সমন্বয়ক করছেন তারা। কেন্দ্রীয় নেতারা এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয় মহানগর ও জেলা নেতাদের নিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। মূল লক্ষ্য নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করা। জানা গেছে, প্রচারণায় বিগত নয় বছরের সরকারের উন্নয়ন এবং বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হচ্ছে। সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহারও তুলে ধরা হচ্ছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় সমস্যা সমাধানের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজীপুর ও খুলনা মুলত আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ দুই সিটিতে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগকে জয়ী হতে হবে। এ জন্য মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হবে। ভোটের আগেই ‘জিতব’ ভাব দেখালে চলবে না। এ ভোটে বিজয়ী হয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। এ দুই সিটিতে সাংগঠনিক দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী হলেও বিগত সিটি নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছিল।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে বিগত সিটি নিবাচনের চেয়ে তারা এবার ভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘প্রটোকল’ দিতে গিয়ে যেন নির্বাচনী প্রচারণার কাজ বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ পৃথক তিনটি টিম গঠন করেছেন। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা থানা ও এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব পালন করছেন। আর খুলনা সিটিতে মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতারাও মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে কাজ করছেন। গতকাল গাজীপুরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বোর্ডবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, টঙ্গিতে সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সদরে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, পূবাইলে কেন্দ্রীয় সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান, কাউনিয়াতে আফজাল হোসেন, কাশিমপুরে সুজিত রায় নন্দী ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে ছিলেন। প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা ঘুরে আসছেন। তারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন। একই সঙ্গে বিগত দিনে বিএনপি মনোনীত মেয়র যে গাজীপুরে কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি সেগুলো জনগণের সামনে আনা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অসীম কুমার উকিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গাজীপুর সিটিতে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের টানা নয় বছরের উন্নয়ন এবং প্রার্থীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিজয়ী হব। সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন থানা ও ইউনিটিতে দায়িত্ব পালন করছি। সিটি নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারা সরকারের উন্নয়ন সব জায়গায় সমানভাবে পেতে চান। তাই এবার নৌকাকেই বেছে নেবে গাজীপুরবাসী। ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান বলেন, গাজীপুরের মানুষ বিগত দিনে যে ভুল করেছিলেন, এবার তার পুনরাবৃত্তি করতে চায় না। সে কারণে নৌকার বিজয় নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে গতকাল একসঙ্গে টঙ্গীর মধুমিতা সড়কে আজমত-জাহাঙ্গীর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। তারা ৪৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান। মধুমিতা রেলগেট, বউবাজার, জামাইবাজার, বিসিক, মিরাশপাড়া, নদী বন্দর, সালামের আটার কল, টঙ্গী রেলস্টেশন, নতুনবাজার, গাজীবাড়ি ও টঙ্গীবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। এর আগে সকালে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়দানা সড়কে প্রচারণা চালান। পূর্ব আরিচপুর জামাইবাজারে পথসভায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীর সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি সুশীল সমাজের অধিকাংশ সংগঠন নৌকার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ। আগামী ১৫ মে নৌকা মার্কা ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করবে। জাহাঙ্গীর বলেন, আজমত ভাইয়ের নেতৃত্বে আমাদের সুসংগঠিত প্রচারণার ফলে মহানগরের ঘরে ঘরে নৌকার রব উঠেছে। আগামী ১৫ মে নৌকা মার্কায় আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। এদিকে খুলনা সিটিতেও ইতিমধ্যে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে অবস্থান করছেন কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন। জেলা ও মহানগর নেতারাও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর আগে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ঘুরে এসেছেন। এদিকে গতকাল খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তারা সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন মামলার আসামি ১৯ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ এনে সকাল সাড়ে নয়টায় ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর জবাবে গতকাল ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের নির্বাচন সমন্বয়কারী এস এম কামাল হোসেন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নৌকার পক্ষে গণজোয়ারে ভীত হয়ে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মঞ্জু বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করছেন। তিনি বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। দলমত নির্বিশেষে মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে খালেকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খুলনায় নৌকার জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির বেশ কিছু কাউন্সিলর প্রার্থীও তালুকদার খালেকের পক্ষে ভোট চাইছেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ সময় খালেকের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনার রশীদ, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক কাজী আমিনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই সিটিতে জয় চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিগত দিনে সিটি নির্বাচনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার এগুচ্ছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিজয় দিয়েই সরকারের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ খবর