শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান চাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান চাই : প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও ব্যাপক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল র‌্যাব সদর দফতরে বাহিনীটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এই নির্দেশ দিয়ে বলেন, এর (মাদক) থেকে আমাদের  ছেলেমেয়েরা যাতে দূরে থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে  ছেলেমেয়েদের রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল  রেখে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার পাশাপাশি দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যেতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি র‌্যাবকে অনুরোধ করব, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেমন আমরা অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, তেমনি এখন মাদকের বিরুদ্ধেও এই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক যারা তৈরি করে, যারা বিক্রি করে, যারা পরিবহন করে এবং যারা সেবন করে, সবাই সমানভাবে দোষী। এটাই মাথায় রাখতে হবে এবং সেভাবেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে ইতিমধ্যে যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের  ছেলেমেয়েরা যাতে এর ছোবল থেকে দূরে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে নিতে হবে।’ এ ব্যাপারে বিশেষভাবে ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে বড় বড় অভিযানে র‌্যাবের সাফল্যের জন্য এর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান এবং এই অভিযান অব্যাহত রাখারও নির্দেশ দেন।

জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সময় অনেকেই মনে করেছিল বাংলাদেশ এককভাবে এর সমাধান করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখান থেকে জঙ্গি নির্মূল করতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে র‌্যাবের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও তিনটি ব্যাটালিয়ন বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান আধুনিক ও যুগোপযোগী হবে। আমরা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। সে জন্য পুলিশের বিশেষায়িত ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) অত্যাধুনিক, ত্রিমাত্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। সে জন্য বাজেটও দিয়েছি। আগামীতে র‌্যাবের  সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও তিনটি ব্যাটালিয়ন বাড়ানো হবে।’

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও বক্তৃতা করেন। বেনজীর আহমেদ বলেন, র‌্যাব এখন যে কোনো সময়ের তুলনায় সুসংগঠিত, আত্মপ্রত্যয়ী, কার্যকর, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুদৃঢ়, শক্তিশালী কমান্ড ও সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থানির্ভর একটি বাহিনী। শান্তির আবাসভূমি হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ার লক্ষ্যে র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। র‌্যাবের প্রতি দেশ ও জনগণের যে আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে তা র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য যে কোনো মূল্যে ধরে রাখবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

সন্ত্রাস, জঙ্গি দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ, জাল-জালিয়াতিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাবের বিভিন্ন ভূমিকা সম্পর্কে এবং সুন্দরবনে র‌্যাবের অভিযানে ২০টি জলদস্যু বাহিনীর ২১৭ জন সদস্যের আত্মসমর্পণ এবং তাদের সাধারণ জীবনে পুনর্বাসন সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মহাপরিচালক বিজিবি, সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ র‌্যাবের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে র‌্যাবের একটি সুসজ্জিত বাহিনী তাকে গার্ড অব অনার দেয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উত্তরা আশকোনা এলাকায় ৮ দশমিক ৫৬ একর জমির ওপর অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত র‌্যাব সদর দফতর কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শহীদ র‌্যাব সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে র‌্যাব সদর দফতরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ‘প্রেরণা ধারা’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর