শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকায় শুরু হচ্ছে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন

অংশ নেবেন বিভিন্ন দেশের ৬০০ প্রতিনিধি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

আগামীকাল ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন বা  সিএফএম। টেকসই শান্তি, ঐক্য ও উন্নয়নের জন্য প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের সম্মেলনে অংশ নিতে সদস্য ৫৭ দেশের মধ্যে ৫২ দেশ ইতিমধ্যেই সম্মতি জানিয়েছে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আসছেন ২৭ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ১২ জন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং ওআইসি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ প্রায় ছয় শ প্রতিনিধি। ওআইসি সদস্য দেশগুলোর বাইরে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। আজ আগ্রহী বিদেশি প্রতিনিধিদের কক্সবাজারে নেওয়া হবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের জন্য। সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিয়ে প্রস্তুত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে ১৯৮৩ সালে ১৪তম সিএফএম

আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। সিএফএম আয়োজন নিয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানান, মুসলিম উম্মাহর শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বে উন্নয়ন সাধনকল্পে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সর্বদাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের  বেশ কিছু দেশ শান্তি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় হুমকি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মুসলিম রাষ্ট্রে বাইরের হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, ‘ইসলামোফোবিয়া’ ও মানবিক বিপর্যয়সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ঢাকা সিএফএম-এ মূলত যে বিষয়গুলো আলোচনায় অধিক গুরুত্ব পাবে সেগুলো হলো— মুসলিম বিশ্বের সংঘাত ও চ্যালেঞ্জসমূহ, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যে ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে কীভাবে সেগুলোর সমাধান করা যায়, বিশ্বব্যাপী যে ইসলামোফোবিয়া তৈরি হয়েছে তা দূরীকরণের উপায় যথা সভ্যতা ও সংস্কৃতির আন্তসংলাপ, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ওআইসি  দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিষয়সহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার  ক্ষেত্র খুঁজে বের করা প্রভৃতি। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট ঢাকা সিএফএম-এ বিশেষভাবে স্থান পাবে এবং এ বিষয়ে সম্মেলনকালে একটি বিশেষ সেশনে তা আলোচিত হবে। এ ছাড়াও আগ্রহী দেশ ও প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার প্রতিনিধি দলের প্রধানকে নিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্প প্রদর্শনের আয়োজন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্যালেস্টাইন ও আলকুদস-এর জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি ও অধিকারের বিষয়টি আলোচনায় বরাবরের মতোই গুরুত্ব পাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আমরা বিশ্বাস করি এই সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগ, অভিজ্ঞতা ও অর্জনগুলো মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে শুধু ওআইসিতেই নয়, বিশ্বেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মাণ, স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিশ্ব পরিমণ্ডলে স্বীয় কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও সুসংহত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও এরূপ একটি সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্জিত সক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে আরও আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। আমরা আশা করছি সম্মেলনটিতে আলোচ্য বিষয় সংক্রান্ত সব রেজ্যুলেশন, ঢাকা ঘোষণাপত্র এবং সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তসমূহ আউটকাম ডকুমেন্ট হিসেবে গৃহীত হবে।  রেজ্যুলেশনসমূহের মধ্যে কয়েকটি যথা- কানেক্টিভিটি,  টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে মিডিয়ার ব্যবহার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে ওআইসি চেয়ার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তাবিত। এ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের কিছু প্রস্তাব রয়েছে। সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এর মাধ্যমে আগামী এক বছরকাল ওআইসি-সিএফএম এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবে।

সর্বশেষ খবর