শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগের কাউন্সিলে কী হচ্ছে ভোট না প্রেস রিলিজ কমিটি

সব বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যস্ত ছাত্রলীগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরে সম্মেলন হলেও কমিটি হয়নি

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নাকি প্রেস রিলিজে কমিটি ঘোষণা হবে তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। দলের ভিতরে দুটি গ্রুপেই এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করেছে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর। বর্তমানে সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি বড় অংশ। আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রচারণা কাজের চেয়ে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন ভোটে না প্রেস রিলিজে হবে তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই দলের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষণা হয়নি। এ ছাড়া বেশকিছু সাংগঠনিক ইউনিটিতে সম্মেলন হলেও কমিটি গঠন হয়নি। এসব কমিটি ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি করবে নাকি আগামী কমিটি করবে তা নিয়ে দলের ভিতরে বিরোধ দেখা দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান কমিটির অধীনে হওয়া সম্মেলনের কমিটি তাদেরই করে যাওয়ার কথা। কিন্তু কমিটি না হওয়ায় হতাশ সোহাগ-জাকির। জানা গেছে, দলের একটি অংশ বলছে, শেখ হাসিনাই সর্বপ্রথম স্বচ্ছ ব্যালটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করে ইতিহাস রচনা করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। আরেকটি অংশ মনে করেন, দীর্ঘদিন থেকে ভোটের রাজনীতি দলের জনপ্রিয় কিছু নেতাই ধরে রেখেছেন। অন্যরা এতে টিকতে পারছেন না। তাই সমানতালে রাজনীতি সৃষ্টি করতে হলে আর ভোটের দরকার নেই। প্রেসরিলিজের মাধ্যমেই কমিটি হওয়া উচিত। গণতান্ত্রিক চর্চার রীতিনীতি অব্যাহত রেখে লাভ নেই। এতে সমস্যা বাড়বে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পদের জন্য ছাত্রনেতারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া চাইছেন। একই সঙ্গে অনুরোধ করছেন দ্রুত তাদের কমিটি দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নেতারা রহস্যময় কারণে কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব করছেন। এতে করে সমস্যা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে এসব কমিটি ঘোষণা দেওয়া হলে পদবঞ্চিতরা ক্ষোভ-বিক্ষোভও করতে পারেন। তাই অনেক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মনে করেন, যেসব সাংগঠনিক কমিটিতে সম্মেলন হয়ে গেছে তা ঘোষণা করা দরকার। না হলে সমস্যা বাড়বে। সূত্রমতে, ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন দলের হাইকমান্ড। দলীয় ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের পারিবারিক ঐতিহ্য, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং স্বভাব চরিত্রের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এবার অনেক যাচাই-বাছাই করেই নেতৃত্ব দিতে চান দলের হাইকমান্ড। ক্লিন ইমেজ, মেধাবীরাই এবার ছাত্রলীগের জায়গা পাবেন বলে জানা গেছে। আগামী ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে নেতৃত্বে আসার আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের বর্তমান সহসভাপতি আদিত্য নন্দী, রুহুল আমিন, সোহান খান, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, চৈতালী হালদার চৈতী, যুগ্ম সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. শওকতুজ্জামান সৈকত, আশিকুল পাঠান সেতু, প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু, ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, কৃষি সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, আইন সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, গ্রন্থনা ও প্রকাশন সম্পাদক রাকিব হোসেন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, বিজ্ঞান সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ আরেফিন, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, গণশিক্ষা সম্পাদক আনিসুল ইসলাম জুয়েল, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ইশাত কাসফিয়া ইরা, রাসেল হোসেন, উপ-স্কুল ছাত্র সম্পাদক অসীম কুমার বৈদ্য, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, উপ-স্কুল ছাত্র সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত ও খাজা খায়ের সুজন, উপ-আইন সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, উপ-পাঠাগার সম্পাদক শেখ ইনান, উপ-পরিবেশ সম্পাদক সুরঞ্জন ঘোষ, সহ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, সহ-সম্পাদক মাহফুজ ইবনে রহমান দীপু, সহ-সম্পাদক এনামুল হক প্রিন্স, উপ-পরিবেশ সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান কনক, ঢাবির এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, জগন্নাথ হলের সভাপতি সঞ্জিত দাস, সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস প্রমুখ। এ ছাড়াও আলোচনায় আছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাহানুর ইসলাম সাকিল, হোম ইকোনমিক্স কলেজের সভাপতি জেসমিন আরা রুমা, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তাসলিমা আকতার। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের ২৬ জুলাই কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেদিন পর্যন্ত যাদের বয়স ২৯ বছরে রয়েছে তাদের নিয়েও আলোচনা রয়েছে সর্বমহলে। সেই হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার (ঢাবি) সভাপতি আবিদ আল হাসান, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি, যুগ্ম-সম্পাদক সায়েম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে আসতে পারেন বরিশাল অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি রুম্মন হোসেন, ফজলুল হক হলের সভাপতি শাহরিয়ার সিদ্দিক শিশিম এবং জসীমউদ্দীন হলের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসেন। ফরিদপুর অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ সেবা সম্পাদক রানা হামিদ, ছাত্র-বৃত্তি সম্পাদক শেখ সাগর আহমেদ, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ রনি, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ শাহরিয়ার কবির, রবিউল ইসলাম, এ এফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান এবং কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান। চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে উপ-গণশিক্ষা সম্পাদক ফখরুল ইসলাম জুয়েল, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা উপ-সম্পাদক মুরাদ হায়দার টিপু, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক এইচ এম তাজ উদ্দিন, উপ-সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি মো. জাবেদ হোসেন, এস এম হলের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল এবং এ এফ রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার। ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, এস এম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস। উত্তরবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, উপ-সম্পাদক হাসানুর রহমান হাসু এবং ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু। অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলোচনায় রয়েছেন উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপ-সম্পাদক সম্পাদক সাগর হোসেন সোহাগ, জিয়া হলের সভাপতি ইউসুফ উদ্দিন খান। এদিকে শীর্ষ পদে এবারই প্রথম নারী নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নতুন মডেলে ছাত্রলীগ গড়ার যে কথা আলোচনা হচ্ছে সেখানে পিছিয়ে নেই নারীরাও। শীর্ষ পদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন—সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক সাবরিনা ইতি, শামসুন্নাহার হলের সভাপতি নিপু তন্বী, সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার।  ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও দক্ষিণের সভাপতির প্রার্থী তালিকায় শীর্ষে আলোচনায় আছেন সদ্য বিদায়ী দুই সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও মহিউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন, সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম লিনাজ, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মিল্লাত, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, মহানগরের সাবেক সহ-সভাপতি আরমান হোসেন, আইন সম্পাদক ছোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক, যুগ্ম সম্পাদক সাগর মজুমদার, উপ-সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ আলমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের হোসেন, কদমতলী থানা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মারুফ, শ্যামপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ ইসলাম শাকিল। ঢাকা মহানগর উত্তরের আলোচনায় আছেন, সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, সহ-সভাপতি মাজহারুল হক মাহফুজ, মাহবুবুল আলম সুমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, সাব্বির আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সম্রাট, ফারুক আহমেদ, ঢাকা পলিটেকনিকের সভাপতি মেহেদী হাসান, গুলশান থানা ছাত্রলীগ সভাপতি বেনজির রহিম খান, ঢাকা পলিটেকনিক্যালের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল মোল্লা, বাড্ডা থানার নজরুল ইসলামসহ দুই ডজন নেতা।

সর্বশেষ খবর