শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুক্ত সাংবাদিকতা নিয়ে আলোচনা

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের আইন করা হবে না : ইনু

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সরকার গণমাধ্যমের সংকোচনে বিশ্বাসী নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন করা হবে না। সরকার গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ নয়। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, সহসভাপতি আজিজুুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হারুন হাবিব ও জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। সভায় স্বাগত বক্তব্যে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম হুমকির মুখে রয়েছে। দিনে দিনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে। সহিংসতা ও অস্থিরতার কারণে প্রায়ই সাংবাদিক খুন হচ্ছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। তিনি বলেন, অতীতে একাধিক মন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারা রাখা হয়েছে, তা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের চেয়েও মারাত্মক। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা অনেকটাই হুমকিতে।

এদিকে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : শঙ্কা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক অন্য এক গোলটেবিল আলোচনায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ডিজিটাল আইন কোনোভাবেই মতামত নিয়ন্ত্রণের আইন নয়, কেবল ডিজিটাল অপরাধ দমনের আইন। ডিজিটাল জগেক নিরাপদ করার আইন। এতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বন্ধ করা হবে না। সাংবাদিকের সোর্স নিয়েও কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এ সভা আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মফিজুর রহমান, আইনের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক নেতা গাজী টিভির সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাবির অধ্যাপক শফিউল আলম, অধ্যাপক হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক প্রভাষ আমিন প্রমুখ। আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সাংবাদিকদের যেন ভয়ের মধ্যে থাকতে না হয়, সে গ্যারান্টি দিতে হবে। মুক্ত গণমাধ্যম স্বাধীন সাংবাদিকতার পূর্বশর্ত। কোনোভাবেই সাংবাদিকদের ওপর তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণ চাই না। একজন অপরাধীকে মোকাবিলার জন্য যদি গণমাধ্যম বাধাগ্রস্ত করা হয়, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তা আমরা চাই না। সভাপতির বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহের সুরক্ষা দিয়ে আইন করতে হবে। তথ্যের প্রয়োজনে সাংবাদিক মোবাইল দিয়ে ফাইলের ছবি তুললে যদি জেল হয়, সেটা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। সোর্স তো গোপনেই তথ্য দেবে, এজন্য আইনে অপরাধ নির্ধারণের একটা সীমারেখা থাকতে হবে। মূল প্রবন্ধে ড. আবদুস সালাম ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারাসহ ৬টি আইন পর্যালোচনা করে বলেন, আইনে সাংবাদিকদের জন্য ‘সেইফটি ক্লজ’ থাকতে হবে। এ ছাড়া সাংবাদিকদের নামে মামলা হওয়ার আগে ‘কুয়াসি জুডিশিয়াল’ বা কোনো একটি বোর্ড থাকবে যাদের মত নিয়ে মামলা হতে পারবে।

সর্বশেষ খবর