শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
রেমিট্যান্সে প্রবাহে ঊর্ধ্বগতি

চার মাসে এসেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা

আলী রিয়াজ

দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বগতি ফিরেছে। কয়েক বছরে নেতিবাচক প্রবণতা কাটিয়ে এবার বাড়ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ। চলতি বছরের চার মাসে এসেছে ৫১৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এর পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি। রেমিট্যান্স বেশি এসেছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই তিন দেশ থেকেই এসেছে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা মোট রেমিট্যান্সের ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি কয়েক বছরে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে। এর প্রভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের কারণে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানোর পরিমাণও কমেছে। ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৫১২ কোটি ডলার। এর মধ্যে জানুয়ারিতে আসে সবচেয়ে বেশি ১৩৭ কোটি ডলার। পরের মাসে ফেব্রুয়ারিতে ১১৪ কোটি, মার্চে ১২৯ কোটি, এপ্রিলে এসেছে ১৩২ কোটি ডলার। গত বছর ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪১১ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ছিল ১০০ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ৯৪ কোটি, মার্চে ১০৭ কোটি ও এপ্রিলে ছিল ১০৯ কোটি ডলার। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এ পরিমাণ ছিল কম। ২০১৪-১৫ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ সালে ১৪৯৩ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ সালে ১২৭৬ কোটি ডলার। এই চার বছরে প্রতিবছর কমেছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। চলতি অর্থবছরে এসে রেমিট্যান্সের গতি বাড়তে শুরু করে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স আসার শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, ওমান, মালয়েশিয়া, ইতালি, কাতার ও বাহরাইন। মূলত এই দেশগুলো থেকেই রেমিট্যান্সের সিংহভাগ আসে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহে মারাত্মক ধস নামে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় সীমাহীনভাবে বেড়ে যায় হুন্ডির লেনদেন। কয়েকটি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালার পরও অবৈধ হুন্ডির পরিমাণ কমানো যায়নি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা পাচার রোধে নতুন নীতিমালা জারি করে। একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। এর ফলে চলতি বছর রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অবৈধ হুন্ডি বা মুদ্রা পাচারে কঠোর নজরদারি রাখছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই-তিন বছরেও প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছে। এখনো অবৈধভাবে রেমিট্যান্স আসছে কি না এ বিষয়েও নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বছর শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে।’

সর্বশেষ খবর