শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রমজানে কনজুমারস কো-অপারেশনে বাজার করতে হবে

জিন্নাতুন নূর

রমজানে কনজুমারস কো-অপারেশনে বাজার করতে হবে

গোলাম রহমান

ঢাকায় সুউচ্চ অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এসব ভবনে বসবাসকারী ২০ থেকে ২৫ জন গৃহিণী যদি রমজানের সময় একত্রিত হয়ে দলবেঁধে পাইকারি দরে একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বাজার করেন, তবে পণ্যমূল্য শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে যাবে। এই কনজুমারস কো-অপারেশনভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে ভোক্তা হিসেবে গৃহিণীরা যদি তাদের সবার চাহিদা যোগ করে একসঙ্গে মিলে বাজার করেন তাহলে পণ্যের দামও সহনীয় থাকবে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। গোলাম রহমান বলেন, সাধারণভাবে দ্রব্যের চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করেই দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ বছর সরকার বলছে, রমজান উপলক্ষে সব পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ যথাযথ আছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যও এখন স্থিতিশীল। ফলে এ বছর এখন পর্যন্ত রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছি না। এর পরও কয়েকটি কারণে রমজানে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। যদি যানজটের কারণে পণ্যসামগ্রী যথাযথ সময়ে বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব না হয় এবং স্থল ও নৌবন্দরে যানজটের জন্য সেখানে থাকা পণ্য যথাসময়ে বাজারে না পৌঁছায় সে ক্ষেত্রেও দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া রমজান ও ঈদের মৌসুমে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বৃদ্ধি পায়; যা দ্রব্যের দাম উসকে দিতে পারে। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদাবাজরাও এ সময় চাঁদা আদায় করে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম এক প্রকার বৃদ্ধি করতে বাধ্য হন। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, শ্রমিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। ক্যাব সভাপতি বলেন, রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ভোক্তাদের আচরণও অনেকাংশে দায়ী। তাদের আচরণের জন্য এ সময় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। অনেক ভোক্তা রোজা শুরুর আগে আগেই সারা মাসের বাজার একসঙ্গে করে রাখেন। ভোক্তাদের একজন করে যদি ১০ কেজি করে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে সংরক্ষণে রাখেন তবে বাজারে সার্বিকভাবে একধরনের বাড়তি চাপ পড়ে। আর এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করেন। তবে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত একটি সিন্ডিকেট এ অপকর্ম করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুর আমদানিকারকের সংখ্যা হাতে গোনা। চার-পাঁচ জন আমদানিকারক এ পণ্যগুলো আমদানি করেন। এ সিন্ডিকেটটি রমজানে দাম বৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে যুক্ত বলে গোলাম রহমান আশঙ্কা করেন। তিনি বলেন, গত বছর রমজানে মিল ওভারহলিংয়ের জন্য বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট আছে এমনটি জানানোয় বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পায়। রমজানে টিসিবি কার্যকর ভূমিকা পালন করে বলে জানান দুদকের সাবেক এই চেয়ারম্যান। যদিও চাহিদার তুলনায় এই ভূমিকা অপ্রতুল। কিন্তু সংযমের এই মাসে টিসিবির ভূমিকাকে তিনি ইতিবাচক বলে মনে করেন। রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছেন। তার মতে, রাস্তায় যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়, পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা যাতে তৈরি না হয় সরকারকে সেদিকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া এ সময় চাঁদাবাজিও যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। এর পাশাপাশি ভোক্তাদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। পুরো এক মাসের বাজার না করে যদি তারা এক সপ্তাহের বাজার করেন তবে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে না। তবে এর মধ্যে যদি কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য সরবরাহে সমস্যা হয় তখন বেগুনের মতো সবজির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।

সর্বশেষ খবর