বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের গোপন মিশনে বিএনপি

প্রস্তুতি চলছে জাতীয় নির্বাচনের, এক আসনে তিনজন করে প্রার্থীর নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে

শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার

‘নো খালেদা নো ইলেকশন’ বললেও ভিতরে ভিতরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে ৩০০ আসনভিত্তিক তিন স্তরের প্রার্থী তালিকাও তৈরি করেছে দলটি। মামলাসহ নানা কারণে প্রথম স্তরের প্রার্থী বাদ পড়লে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতেও প্রার্থী তালিকা রয়েছে। তিনি লন্ডন থেকেই সংশ্লিষ্টদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন বর্জন কোনো রাজনীতি হতে পারে না। তবে রাজনীতিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৌশল নিতে হয়। সেখানে বিএনপি কতটুকু সফল বা ব্যর্থ আমি সেদিকে যাব না। কিন্তু এবার বিএনপিকে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, নির্বাচনে না গেলে ভবিষ্যতে দলটিকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, ‘নো খালেদা নো ইলেকশন’ একটি বাহ্যিক স্লোগান। ভিতরে ভিতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। কারাগারে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া বিএনপির নেতা ও পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমেও তিনি নির্বাচনী বার্তা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার মুক্তির দাবিতে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে না যাওয়ার জন্যও নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক সম্ভাব্য সব প্রার্থীই নিজ নিজ এলাকায় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি গোপনে নির্বাচনী কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পরই তারা প্রকাশ্যে  মাঠে নেমে যাবেন। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতেও রাজপথে ‘নরম’ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে দলটি গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সবসময়ই রয়েছে। দেশের ৩০০ আসনের বিপরীতে সারা দেশে বিএনপির কমপক্ষে তিনগুণ যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। আর আগামীকালও যদি নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন হয়, তবুও নির্বাচনে প্রস্তুত বিএনপি। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের সামনে একমাত্র ইস্যু হচ্ছে, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি’। 

জানা যায়, কৌশলগত কারণেই দলের বড় একটি অংশ বলছে, ‘নো খালেদা নো ইলেকশন।’ এর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখাই তাদের উদ্দেশ্য। তবে দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ বলছে, বেগম জিয়া ছাড়া নির্বাচন নয়। তারা গণতান্ত্রিক পর্যায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপিপ্রধানকে মুক্ত করেই নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বও কাজ করছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুজনই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। এই দুজনের অবর্তমানে কীভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে এবং ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে তা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমেই উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিও চলবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দল ৩০টি আসনও পাবে না। দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন নিয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে। কিন্তু সরকার বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইরে রেখে ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি ‘যেনতেন’ নির্বাচনের নীলনকশা করছে। এ জন্য তাঁকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। আমার স্পষ্ট কথা হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং জনগণ হতে দেবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর