বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনে যত বিড়ম্বনা

রিটার্নিং অফিসারে ভরসা নেই খালেকের, মঞ্জুর পুলিশে

পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

রিটার্নিং অফিসারে ভরসা নেই খালেকের, মঞ্জুর পুলিশে

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারকে নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন খোদ সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। নির্বাচন কমিশনে তিনি এ বিষয়ে অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুহসীন হল ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা বাছাইয়ে তার আদর্শ স্পষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অভিযোগ পুলিশের দিকে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ সরকারি দলের পক্ষে কাজ করছে। আমার নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। পরাজয় ঠেকাতে সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করছে।’ গতকাল পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন এই দুই মেয়র প্রার্থী। দুপুরে নগরীর পুরাতন যশোর রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগের মহানগর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপি পরাজয়ের আশঙ্কা উপলব্ধি করে যথেচ্ছা অসত্য কথা বলে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। তারা বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠে নেমেছে। বিএনপি ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টা করছে। পাঁচ বছর উন্নয়নবঞ্চিত নগরবাসী আর মিথ্যাচারে কান দেবে না। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খালেক বলেন, চরমপন্থি আর সর্বহারাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ভোট কেটে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল। তারা ক্ষমতায় গিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে গৃহহারা করেছিল। বিএনপির নেতারা নিজেরা যেমনটি করেছিলেন, অন্যকেও তেমন মনে করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি মেনে নিতে পারে। কিন্তু বিএনপি পরাজয় হলেই সেখানে কারচুপির গন্ধ খুঁজতে থাকে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসারকে নিয়ে আমাদের সংশয় আছে। রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তার আদর্শগত টান তো থাকবেই।’ খালেক বলেন, ‘আমরা শুনেছি, যাদের প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্রশিবির ও জামায়াতের মতাদর্শের। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেছি।’ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এস এম কামাল সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মঞ্জুর সংবাদ সম্মেলন : গতকাল সকালে নিজের মিয়াপাড়ার বাসভবনে দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘আজকেও একটি নির্ঘুম রাত কেটেছে আমার। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর থেকে আবার দ্বিতীয় দফায় পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে শহরময়। পাঁচটি থানায় এ সাঁড়াশি অভিযানে শত শত পুলিশ অংশ নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে অন্তত ২০০ নেতা-কর্মীর বাড়িতে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে। সরকার তার পরাজয় ঠেকাতে পুলিশকে অসত্ভাবে ব্যবহার করছে। যতই ঝড় আসুক, বিএনপি তথা ২০-দল এ নির্বাচন থেকে সরে যাবে না। বিএনপি ও ২০-দলের নেতা-কর্মীদের এখনো মনোবল অটুট।’ মঞ্জু বলেন, ‘গতকাল রাত সোয়া ১টায় নগর বিএনপির সহ-সম্পাদক একরামুল কবির মিল্টনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন টারজানকে গ্রেফতার করেছে রাত ৩টায়, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দাদা ম্যাচ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক নেতা আলম হাওলাদার, ৬ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দল নেতা লোকমান হোসেনসহ গত দুই দিনে শ’খানেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হুমকি দিয়েছে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে।’ মেয়র প্রার্থী মঞ্জু বলেন, ‘আমি বিচার দেব আল্লাহর কাছে। বিচার দেব জনগণের কাছে, বিচার দেব খুলনার ভোটারদের কাছে। আমাকে এই নির্বাচন থেকে সরানোর জন্য সরকার চূড়ান্তভাবে আক্রমণ করেছে, করছে। এত আক্রমণের মধ্যে যেন আমার পাশে ভোটাররা থাকেন, খুলনাবাসী থাকেন।’ সংবাদ সম্মেলনে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বিজেপির নগর সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ আবদুর রশিদ ও নগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক শামসুজ্জামান চঞ্চল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর