বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

এই ভিনদেশিদের দেশ কোথায়

মাদক জালিয়াতি প্রতারণা ও অনুপ্রবেশে সাজা শেষ ১০৩ বিদেশির, ফেরত নিতে আগ্রহী নয় সংশ্লিষ্ট দেশ

মাহবুব মমতাজী

সাজার মেয়াদ শেষ হলেও এখনো মুক্তি মেলেনি ১০৩ জন বিদেশি বন্দীর। তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এদের বেশিরভাগের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছরের বেশি আগে। এরা বিভিন্ন সময়ে মাদকের চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দেওয়া হয়। আদালতের মাধ্যমে পরবর্তীতে এদের কারও কারও সাজা দেওয়া হয় তিন থেকে ছয় মাস এবং কারও কারও সর্বোচ্চ দুই বছর। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের পরিচয়, নাম-ঠিকানা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে আগ্রহী না হওয়ায় এসব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও কারাগারেই রাখতে হচ্ছে। জানা যায়, শ্রী বসন্ত রায়। বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা সীমান্তে মাদক বিক্রির সময় ধরা পড়ে। এরপর তাকে অনুপ্রবেশের অপরাধে ৬ মাসের জেল দেয় আদালত। তার সাজা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২০ মে। আর সাজার মেয়াদ শেষ হয় একই বছরের ২০ নভেম্বর। ভারতের আরেক নাগরিক ইসমাঈল হোসেন। তিনি আসাম রাজ্যের বাসিন্দা। তিনিও মাদকসহ আটক হন। অনুপ্রবেশের অভিযোগে আদালত তাকে এক বছরের জেল দেয়। তার সাজা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৩ মে। শেষ হয় ২০১৭ সালের ১৮ মে’তে। মিয়ানমারের নাগরিক অভিজিৎ মারমা। তার বাড়ি আকিয়াব রাজ্যের মঙডুতে। ইয়াবা চোরাচালানের অভিযোগে তার ৬ মাসের সাজা শুরু হয় গত বছরের ১৭ জুলাই। এ বছরের জানুয়ারিতে সাজা শেষ হলেও তার মুক্তি মেলেনি। বরাত সিং। তার বাড়ি নেপালের মিতাবাজার বাহারতুলিতে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তার ৩ মাসের জেল হয়। সাজা শুরু হয়েছিল গত বছরের ১৫ মে। আর শেষ হয় ১৪ সেপ্টেম্বর। শুধু এ চারজনই নয়, এমন সংখ্যা শতাধিক। তবে এসব বন্দীর বেশিরভাগ ভারতের নাগরিক। তাদের দেশ, গ্রাম-পরিচয় জানা থাকলেও কেন ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না? জানতে চাইলে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদককে বলেন, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেই। পরবর্তীতে তারা তাদের নাগরিকদের নাম-ঠিকানা ও স্বজনদের বিষয়ে কোনো ক্লিয়ারেন্স দেয় না। কাগজপত্রে পরিচয় সংক্রান্ত নিশ্চিত না হওয়ার জন্যই ফেরত পাঠানোর এই জটিলতা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলো তাদের নাগরিকদের গ্রহণ না করলেও মুক্তি দেওয়ার সুযোগ থাকে না।  কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, মুক্তি অপেক্ষায় থাকা বন্দীদের বেশিরভাগ ভারতের পাশাপাশি আছে মিয়ানমার, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, তানজেনিয়া, নেপাল, পেরু, আলজেরিয়া, মালয়েশিয়া, ক্যামেরুন, থাইল্যান্ড, চায়না, স্পেন, জার্মানি, নেপাল, ইরান ও ঘানার নাগরিক। এর মধ্যে ভারতেরই ৭৬ জন। আর সাজা শেষের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ৫০ জন। সাজা হয়নি কিন্তু হাজতী হিসেবে বন্দী আছে প্রায় ৫০০ জন। ভারতের ৫২ জন, মিয়ানমারের ৩০৮ জন, পাকিস্তানের ২৯ জন, নাইজেরিয়ার ৫, তানজেনিয়ার ১, পেরুর ৩, আলজেরিয়ার ১, মালয়েশিয়ার ৫, থাইল্যান্ডের ৭, চায়নার ১, স্পেনের ১, জার্মানির ১ এবং ঘানার ১ জন। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সমস্যাটি শুধু দূতাবাস কেন্দ্রিক নয়। এটি দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ভিত্তিক। এর জন্য পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি চুক্তির মাধ্যমে বন্দীদের হস্তান্তর করতে হবে। নয়তো ক্ষুদ্র বিদ্যমান আইনের মধ্যে থাকলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।  সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি বন্দীদের বেশির ভাগই কক্সবাজার, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, বান্দরবান, ঢাকা, কাশিমপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, যশোর ও খুলনা কারাগারে আটক রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর