বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাকিস্তানের নিম্নমানের গম নিয়ে তোলপাড়

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দুই মাসে প্রবেশ খাবারের অযোগ্য পাঁচ লাখ টন

নিজস্ব প্রতিবেদক

হঠাৎ করেই পাকিস্তান থেকে নিম্নমানের গম আমদানি করছে কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ। যদিও বাংলাদেশ সবসময় উন্নতমানের গম আমদানি করে রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। মানুষের খবারের অযোগ্য হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা কখনো আগ্রহ দেখান না পাকিস্তানের গমে। গত বছর কোনোভাবেই পাকিস্তানি গম আনা হয়নি। অথচ চলতি বছরের দুই মাসে ৫ লাখ টনের বেশি নিম্নমানের পাকিস্তানি গম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আরও ১০ লাখ টন গমবাহী জাহাজ বন্দরে নোঙর ফেলার অপেক্ষায়।

সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন গমের মূল্য ৩০ থেকে ৪০ ডলার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ পাকিস্তানের গমের দিকে ঝুঁকছেন। মুনাফার বিষয়টি আমদানিকারকদের প্রাধান্যের কারণে ঠকছেন সাধারণ ভোক্তারা। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন গমের আটা এরই মধ্যে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে গেছে। এসব আটা নিয়ে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। ঝুঁকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানি গম দেখতে ভালো মনে হলেও তা অনেক নিম্নমানের। পাকিস্তানি গমে থাকে প্রচুর পাথর, বালু ও মাটি। কলে ভাঙানোর পর আটায় থাকছে প্রচুর বালুকণা। এসব আটা মানবদেহে বিশেষ করে পাকস্থলীর অনেক রোগের কারণ হতে পরে। গত বছর বাংলাদেশে ৫৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি হয়। এ বছর আমদানির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে রাশিয়া, আর্জেন্টিনা ও ইউক্রেনের গমের মূল্য ২১ হাজার ৫০০ ডলারের কাছাকাছি। পাকিস্তানি গমের মূল্য ১৯ হাজার ৫০০ ডলারের কিছু বেশি। দেশে আমদানিকৃত গমের বেশির ভাগই আসে রাশিয়া, ইউক্রেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া থেকে। অতীতে কিছু ব্যবসায়ী পাকিস্তান থেকে অল্প পরিমাণ গম আমদানি করলেও গত বছর তা ছিল শূন্যের কোঠায়। অথচ এবার মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ নিজেদের স্বার্থে নিম্নমানের গম আমদানি করছে।

এদিকে, আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম জানিয়েছেন, দেশের গুরুত্বসম্পন্ন বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজারে গম নিয়ে অসাধু কারবারে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা। ভোক্তাদের মাঝেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে চরম অসন্তোষ। চট্টগ্রাম বন্দর ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া বা ইউক্রেনের মানসম্পন্ন গমের বাজার দখল করতে অপেক্ষাকৃত কম মানের পাকিস্তানি গমের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সক্রিয়। খাতুনগঞ্জের এক ব্রোকার শওকত জানালেন, মণপ্রতি রাশিয়ার গম ৮২০ থেকে ২৫ টাকা, ইউক্রেনের গম ৮১৫ টাকা, আর্জেন্টিনার গম ৮২০ থেকে ৩০ টাকা ও পাকিস্তানি গম ৮০৫ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে গমের এখন কোনো সংকট নেই বলে জানান এই ব্যবসায়ী। খাতুনগঞ্জের ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির জানান, বর্তমান বাজারে উন্নতমানের হওয়ায় ইউক্রেন আর রাশিয়ার গমের চাহিদা বেশি। অথচ নিম্নমানের পাকিস্তানি গম আদমানি করা হচ্ছে। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পাকিস্তানি গম বাজারে সরবরাহের জন্য একশ্রেণির ব্যবসায়ী নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এদিকে, নিম্নমানের পাকিস্তানি গমে বাজার সয়লাব করার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে তীব্র জনমত গড়ে উঠেছে। ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নিম্নমানের গমের চালান কাদের গাফিলতিতে ঢুকছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ ছাড়া পাকিস্তানি পণ্য বা খাদ্যশস্য বয়কটের দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও যারা এটি আনলেন তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। খাতুনগঞ্জের আড়তদার সমিতির সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, নিম্নমানের গম বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থহানি হচ্ছে। এটি ঠেকাতে বাজার মনিটরিং করতে হবে। এদিকে, চিটাগাং চেম্বারের একাধিক নেতা জানান, ভোক্তাস্বার্থ ক্ষুণ্ন করে ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট করার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেও মনিটরিং করা দরকার।

সর্বশেষ খবর