বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহাকাশের পথে যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহাকাশের পথে যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

মহাকাশের পথে যাত্রা করছে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় মহাকাশের পথে উড়বে  বাংলার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এর মহাকাশ যাত্রা সফল হলে উজ্জ্বল হবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। এর মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অভিজাত দেশের ক্লাবেও নাম লেখাবে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একই সময়ে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি ওই মাহেন্দ্রক্ষণে সংযুক্ত হবেন। বিটিভিসহ বাংলাদেশের সব বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উেক্ষপণ সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ হবে বাংলাদেশ সময় ১১ মে দিবাগত রাত ভোর ২টা ১১ মিনিট থেকে ভোর ৪টা ২২ মিনিটের সময়। এ উেক্ষপণ অনুষ্ঠানটি ব্যাপক প্রচারের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। আর স্যাটেলাইট উেক্ষপণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভির মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট। যা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। এটি সফলভাবে মহাকাশে গেলে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দফায় দফায় তারিখ পেছানোর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণের নতুন তারিখ হচ্ছে আজ ১০ মে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, ৫ মে স্যাটেলাইটটি উেক্ষপণের কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হতে পারে এ আশঙ্কায় তা পিছিয়ে যায়। এ ব্যাপারে বিটিআরসির চেয়ারম্যান সম্প্রতি বলেছিলেন, স্পেসএক্স জানিয়েছে ৫ মে নয়, ৭ মে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো হবে। সেই তারিখেও স্যাটেলাইট পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার  উেক্ষপণের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উেক্ষপণে ব্যবহার করবে একটি ফ্যালকন-৯ ব্লক ফাইভ রকেট। গত ৪ মে  ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে নতুন এই রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন হয়। তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটবে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে। এই লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকেই ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে ফ্রান্সের তালিস এলিনিয়া  স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। স্যাটেলাইটের কাঠামো তৈরি, উেক্ষপণ, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানটির। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়।

 স্যাটেলাইট উেক্ষপণের জন্য প্রথমে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হলেও হারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। সরকারের আশা, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, ১০ মে এ উপগ্রহ উেক্ষপণে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অন্যগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে গাজীপুর ও রাঙামাটিতে।

সর্বশেষ খবর