শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
নতুন ভাবনায় দুই দল

ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার কৌশলে বিএনপি

চলছে জয় পরাজয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ

মাহমুদ আজহার

ভোটের দিন খুলনায় বিএনপি দাঁড়াতেই পারেনি। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার কৌশল ছেড়ে নিজেরাই ছিলেন মাঠছাড়া। অনেক কেন্দ্রে দলীয় পোলিং এজেন্টও যেতে পারেনি। নেতা-কর্মীরা অনিয়মের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে পারেননি। এ নিয়ে গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল মূল আলোচনা। সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছাড়াও দলের মাঠপর্যায়ে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার কৌশলের কথাও বলেছেন অনেকেই। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির এক অঙ্গসংগঠনের নেতা বলেই ফেললেন, ‘প্রকাশ্যে সিল মেরেছে প্রতিপক্ষ, ভয়-ভীতি দেখিয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ দূরের কথা, মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন। এটা আগে কখনো হয়নি। দু-চারজন যারা ছিলেন, তারাও ছিলেন নীবর দর্শক। গতকাল দুপুরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা ভোট নিয়ে নানা কথা বলেন। তারা বলেন, খুলনায় ভোট ডাকাতি হয়েছে তা গণমাধ্যমের সুবাধে বিশ্ববাসী দেখেছে। এটা জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব পড়বে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে সিইসির পদত্যাগ দাবিতে কঠোর কর্মসূচির কথাও উঠে আসে নেতা-কর্মীদের আলোচনায়। তবে এ নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচনের শিক্ষা নেওয়ার কথাও বলেন একজন। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির এক নেতা জানান, স্থানীয় সরকার আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। খুলনায় সরকারের সব শক্তি একসঙ্গে কাজ করেছে। জাতীয় নির্বাচনে তা হবে না। সারা দেশে একযোগে নির্বাচন। তবে এ নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছুই আছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, খুলনায় কী হয়েছে দেশ-বিদেশের সচেতন মহলের সবাই অবগত। এ ধরনের ভোট ডাকাতি অবশ্য আওয়ামী লীগের পুরনো অভ্যাস। এখন আমাদেরও ভাবতে হবে ভবিষ্যতে কীভাবে ভোট ডাকাতি ঠেকানো যায়। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা যায় কীভাবে তার কৌশলও নিতে হবে।

খুলনা মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, নির্বাচনের দিন আমাদের নেতা-কর্মীদের অবস্থান ছিল হতাশাজনক। যদিও পুলিশি হামলা-মামলার ভয়ও ছিল। তা ছাড়া ৩১টি ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মেয়রের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে মনোযোগী ছিলেন বেশি। আবার বিএনপি সমর্থিত চার-পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে ভোট চেয়েছেন। এর মধ্যে হাফিজুর রহমান নামে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে বহিষ্কারও করা হয়। অবশ্য হাফিজুরসহ ওই পাঁচজনই কাউন্সিলর পদে এবারও বিজয়ী হয়েছেন।

খুলনা বিএনপির আরেক নেতা জানান, কয়েকজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা খুলনায় গেলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা কিংবা পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। এ ছাড়া বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও আগের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। তাদের সঙ্গেও মঞ্জুর বোঝাপড়া ভালো ছিল না। খুলনা মহানগন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুরের প্রভাবশালী নেতা মিঠুর সঙ্গেও মঞ্জুর শেষ পর্যন্ত সম্পর্কের অবনতি ছিল। তবে খুলনা সিটির সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘খুলনায় নজিরবিহীন ভোট কাটার মহোৎসব হয়েছে। মানুষ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ যা করল তা ন্যক্কারজনক। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।’

সর্বশেষ খবর