শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাতিসংঘে উন্নয়নের গল্প শোনালেন ড. আতিউর রহমান

প্রতিদিন ডেস্ক

জাতিসংঘে উন্নয়নের গল্প শোনালেন ড. আতিউর রহমান

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই মানবিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অফিসে (এইচডিআরও) ‘মানবিক উন্নয়নের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এনআবিনিউজ।

ড. আতিউর বলেন, এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দূরদর্শী আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কৌশল আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার যথার্থ ভূমিকা করায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং অনুকরণের মাধ্যমে সারা বিশ্ব সুফল পেতে পারে। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন এইচডিআরওর পরিচালক ড. সেলিম জাহান। এইচডিআরওর কর্মকর্তারা ছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগ, যেমন—ইউএনডিইএসএ, ইউনডিপি ব্যুরো ফর পলিসি প্রোগ্রাম অ্যান্ড সাপোর্ট (বিপিপিএস), ইউএনডিপি ব্যুরো ফল ল্যাটিন আমেরিকান অ্যান্ড দি ক্যারিবিয়ান (আরবিএলএসি), এবং ইউএনডিপি ক্রাইসিস প্রিভেনশন ব্যুরোর প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। সূচনা বক্তব্যে ড. সেলিম জাহান বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁর মতে এসব উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকৃত অর্থেই ‘দরিদ্র মানুষের ব্যাংক’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

কর্মশালায় ড. আতিউর রহমান মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। তার উপস্থাপনা সারা বিশ্বে লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। নিবন্ধে ড. আতিউর কীভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সব স্তরের মানুষের জন্য আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে জনগণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, এবং ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বা ব্যাংকিং সেবা কম পাওয়া ব্যক্তিদের এই সেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এবং এর ফলস্বরূপ মানবিক উন্নয়নের সূচকেও উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে।

ড. আতিউরের মতে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তা থেকে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও তাদের অতিদরিদ্র, আদিবাসী ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা নিতে পারে। এ ছাড়াও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির গণতন্ত্রায়নেও জোরালো ভূমিকা রাখে বলে তিনি মনে করেন। ড. আতিউর তাঁর নিবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর উদাহরণ দেন। এর মধ্যে ছিল— কয়েক মিলিয়ন জামানতবিহীন ব্যাংক হিসাব (দশ টাকার ব্যাংক হিসাব) খোলা, ব্যাপকভিত্তিক মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস, এজেন্ট ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং, কৃষকের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা, নারীসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সুবিধা। এগুলো দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এসব সম্ভব করে তোলার জন্য যথার্থ প্রণোদনা ও মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকারদের মানসিকতাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হয়েছে বলে জানান ড. আতিউর। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এসব উদ্যোগের সুফল বর্ণনা করতে গিয়ে ড. আতিউর বলেন, এর ফলে একদিকে অর্থনীতিতে অবিশ্বাস্য রকম ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, অন্য দিকে জিডিপির ক্রমবর্ধমান ধারাও বহাল রাখা সম্ভব হয়েছে। আর এর সুফল পৌঁছে দেওয়া গেছে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছেও। তবে এরপরও নীতিনির্ধারকদের জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অবশিষ্ট অতিদরিদ্র জনগণের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে বলে মনে করেন ড. আতিউর। তাঁর মতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মানবিক উন্নয়নের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে হলে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সার্বিক নীতি-কৌশল ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নিবন্ধ উপস্থাপন শেষে ড. আতিউর রেমিট্যান্স প্রবাহ, সঞ্চয়, ক্ষুদ্র বীমাসহ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেন।

সর্বশেষ খবর