বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইমানের স্বাদ গ্রহণ করি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইমানের স্বাদ গ্রহণ করি

গত রাতটি ছিল পবিত্র রমজানের ২৭তম রাত। অনেক বর্ণনা মতে, এ রাতে শবেকদর হতে পারে। তবে এই রাতেই যে শবেকদর হবে তা কিন্তু নিশ্চিত বলা যাবে না। সামনে এখনো হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ২৯তম রাত বাকি আছে। ওই রাতটিও শবেকদরের সম্ভাবনাময় রাত। আর যদি গত রাতে শবেকদর চলেও যায় তারপরও নফল ইবাদত ছাড়া যাবে না। এখনো রমজানের কয়েকটি দিন বাকি আছে। পবিত্র রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহপাক বরকতময় করেছেন। তাই আমরা প্রতিটি মুহূর্তকে অতি বরকতময় মনে করে ইবাদতের চাকা সচল রাখি। রমজানের পর বাকি ১১টি মাসও আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি থেকে গাফেল না হই। নিজেকে একজন প্রকৃত ইমানদার হিসেবে গঠন করার চেষ্টা করি। প্রকৃত ইমানদার হতে পারলে সব সময় ইমানের স্বাদ পাওয়া যাবে। মূলত মুমিনরাই ইমানের স্বাদ পেয়ে থাকেন। হাদিসে এসেছে, হজরত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন। ‘ইমানের স্বাদ ওই ব্যক্তি পায় যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালাকে রব হিসেবে গ্রহণ করে আনন্দিত হয়। দ্বীন হিসেবে ইসলামকে পেয়ে এবং হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী ও রসূল হিসেবে পেয়ে (আনন্দিত হয়)’। (মুসলিম শরিফ)। হাদিসের মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনটি বিষয়ের আলোচনা করেছেন। এক. আল্লাহ আমার রব, তিনিই আমার সব। তিনিই আমার লালন-পালনকারী, আমার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস, জীবন, মরণ, ইবাদত। এক কথায় যাবতীয় সবকিছুর মালিক তিনিই। মনে-প্রাণে এই ইয়াকিন ও বিশ্বাস নিয়ে ইবাদত করলে প্রতিটি ইবাদতে ইবাদতকারী এক অনন্য স্বাদ অনুভব করবে যা দুনিয়ার অন্য কোনো কিছুর মধ্যে পাওয়া যায় না। সে মনে করে আমার আল্লাহ যে কাজে সন্তুষ্ট থাকেন আমিও সেই কাজে সন্তুষ্ট আছি। সারাটি জীবন সে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন করার মাঝেই নিজের জীবনের অনেক পাওয়া মনে করে। সে ইবাদতকে শুধুু রমজানের সঙ্গে সীমাবদ্ধ রাখে না বরং মৃত্যুর পূূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ইবাদতের চাকা সচল রাখতে হবে— এমন বিশ্বাস করে। দুই. ইসলাম আমার ধর্ম। তা নিয়ে আমি অনেক আনন্দিত। আল্লাহপাক পছন্দ করেছেন বলেই তো আমাকে মুসলমানের ঘরে জন্ম দিয়েছেন। অভিভাবকরা আমার নাম মুসলিম নিয়মানুসারে রেখেছেন। সেই অনুযায়ী লালন-পালন করেছেন। এখন আমি একজন মুসলিম। আমি হালালকে হালাল জেনে গ্রহণ করি এবং হারামকে হারাম জেনে তার থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। ইসলামের প্রতিটি বিধানাবলি অত্যন্ত সুন্দর তা অনুভব করে আনন্দিত হই আর আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করি। তিন. আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তিনি সর্বদিক থেকে অসাধারণ গুণাবলির অধিকারী ছিলেন। আমি একজন অসাধারণ নবীর উম্মত হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করি, নিজের জন্ম সার্থক হয়েছে বলে বিশ্বাস করি এবং নিজের জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করার মাঝে পরম আনন্দ অনুভব করি। তাই চলুন! হাদিসে বর্ণিত উল্লিখিত তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ করে যদি আমরা জীবন পরিচালনা করি, তখন অবশ্যই আমরা পূত-পবিত্র জীবন উপহার পাব, কবরের সওয়াল-জওয়াবসহ পরকালীন জীবন সুখকর হবে এবং আল্লাহর রেজা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে হাদিসের ওপর পরিপূর্ণভাবে আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর