রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

পারল না মেসির আর্জেন্টিনা

৪-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টারে ফ্রান্স

পারল না মেসির আর্জেন্টিনা

হতাশ মেসি। অধরাই থাকল বিশ্বকাপ —এএফপি

অনেক ফাঁকফোকর গলিয়ে লিওনেল মেসিকে খুঁজে নেয় ক্যামেরার চোখ। ক্যামেরার লেন্সে মেসিকে বিমর্ষ মনে হলো! পাঁচবারের বিশ্বসেরা ফুটবলার তাকিয়ে আছেন উদাস নয়নে। বিশ্বকাপের সোনার হরিণটা কি মেসি শূন্যে খুঁজে বেড়াচ্ছেন? হয়তো বা। মেসি যা ভেবেছিলেন, তা আর হলো কই! বিশ্বকাপের শিরোপাটা অধরাই রয়ে গেল। মনে মনে কত আফসোস করছিলেন হয়তো তিনি। ইশ! ডি বক্সের ভিতরে বল পেয়েও কেন যে গোলটা করতে পারলাম না! মেসির এই আফসোসের বিপরীতে ছিল উৎসবের দৃশ্য। কাজান অ্যারিনার সবুজ গালিচায় গ্রিজম্যান-এমবাপ্পেদের নিয়ে উৎসব করতে লাগল ফ্রান্স। গ্যালারিতে থাকা একদল সমর্থকের দিকে ছুটে গেল দলটা। ফ্রেঞ্চ কোরাস গাইতে লাগল তারা। ৪-৩ গোলের একটা ম্যাচ জয়ের পর এমন উৎসব  তো ওরা

করবেই! বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে ফ্রান্স। আর বিদায় নিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচ শেষ হয়েছে। পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। কিন্তু আর্জেন্টাইন সমর্থকরা গ্যালারি ছাড়ছিল না। লিওনেল মেসিরাও মাঠের মধ্যভাগে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে রইলেন। একসময় নিরাপত্তাপ্রহরীরা এগিয়ে এসে আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে মাঠ ছাড়তে লাগল। আর্জেন্টাইন সমর্থকরা জোর করতালিতে স্বাগত জানাল মেসিদের। কেন? হেরে গেলেও দুর্দান্ত খেলেছে আর্জেন্টিনা। তিনটি গোল করেও যদি হেরে যায় দল তাকে দুর্ভাগ্য বলেই যে মেনে নিতে হবে! আর্জেন্টাইন সমর্থকরা মেসিদের খেলায় সন্তুষ্ট হয়েই মাঠ ছাড়ল! কিন্তু এটা যে বিশ্বকাপ! এ মঞ্চে পরাজয়টাই সার কথা। আর নকআউট পর্বের ম্যাচে হেরে যাওয়া মানেই বিদায়। এবার বাড়ির পথ ধরতে হবে আর্জেন্টিনার। মেসি কি বাড়ি ফিরবেন! রোসারিওতে নাকি স্ত্রী রোকোজ্জুকে নিয়ে ছুটি কাটাতে যাবেন কোথাও দুঃখ ভুলতে। তিনি ফিরতে পারেন বার্সেলোনার চেনা পরিবেশেও। লিওনেল মেসি ইতিহাসের পাতায় সেই ফুটবলার হয়েই থাকলেন, যার নামের পাশে সবকিছু থাকলেও নেই কেবল বিশ্বকাপ ট্রফিটা। লিওনেল মেসি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে কখনো গোল করেননি। এই বাস্তবতা থেকে বের হতে পারলেন না তিনি। গতকাল দারুণ কিছু সুযোগ পেয়েও পারলেন না মেসি। তবে দুটি গোলের সূত্রপাত তো তিনিই করেছেন। মেসির কাছ থেকে যে আরও অনেক বেশি আশা করেছিল আর্জেন্টিনা! মেসির বেদনা তাই শেষ হওয়ার নয়।

লিওনেল মেসির বেদনার উল্টো পাশটা দারুণ আনন্দমুখর। গাঢ় নীল রঙের ফ্রান্স নানা রঙের উৎসবে মেতেছে। বিশ্বকাপের এক শীর্ষ ফেবারিটকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা। এই ফ্রান্সকে রোখার সাধ্য কার! কিলিয়ান এমবাপ্পের গতির কাছেই তো প্রথম হার স্বীকার করল আর্জেন্টিনা। বাধ্য হয়েই যেন ডি বক্সের ভিতরে পিএসজি তারকাকে ফাউল করেছিলেন রোহো। হলুদ কার্ডও দেখলেন তিনি। পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন গ্রিজম্যান। তারপর ডি মারিয়ার গোলে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। মেসির পাসে বল পেয়ে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন গ্যাব্রিয়েল মারসাদো। কিন্তু ম্যাচের মাঝখানে ১১ মিনিটের একটা ঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় আর্জেন্টিনাকে। জয়ের স্বপ্নটা ভেসে যায় কাজান অ্যারিনার পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা ভলগা নদীতে। ৫৭ মিনিটে গোল করেন বেনজামিন প্যাভার্ড। ৬৪ ও ৬৮ মিনিটে দুটি গোল করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ম্যাচসেরাও তিনিই। এরপর অতিরিক্ত মিনিটে একটি গোল করেও দলের পরাজয় ঠেকাতে পারলেন না আগুয়েরো। আর্জেন্টিনা পরাজয় স্বীকার করেই মাঠ ছাড়ল।

কাজান অ্যারিনায় গোলের উৎসব দেখলেন সমর্থকরা। কখনো ফ্রান্স এগিয়ে যাচ্ছে, কখনো আর্জেন্টিনা। এগিয়ে যাওয়ার এ ধারায় শেষটায় জিতে গেল ফ্রান্স। তবে গতকাল রাশিয়া বিশ্বকাপে দারুণ একটা লড়াই দেখলেন দর্শকরা। গোলের পর গোলে উৎসব করলেন সবাই। আর উৎসব করল কাজানের মানুষ। তারা নেচে-গেয়ে ফুটবল সমর্থকদের মন ভরিয়ে দিল। আর্জেন্টাইন সমর্থকরা মাঠের লড়াইয়ে হেরে তিক্ত বেদনা নিয়ে বের হলে কাজানের মানুষ তাদের সমবেদনা জানাল। জড়িয়ে ধরে আদর করল। পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। অন্যদিকে ফরাসিদের বিজয়োৎসবেও শামিল হলো ওরা। নেচে-গেয়ে সাধুবাদ জানাল বিজয়ীদের। ফ্রান্স এবার পাড়ি জমাবে নিঝনি নভগরদে। নিষিদ্ধ শহরে! বিশ্বকাপের আগেও এ শহরটা নিষিদ্ধ ছিল। বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বেশিদিন হয়নি। এ মাঠেই ৬ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নামবে ফ্রান্স।

সর্বশেষ খবর