রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

কাজান জুড়েই উত্তেজনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কাজান থেকে

‘তোমরা কী বাংলাদেশ থেকে এসেছ?’ বাংলা ভাষা শুনে ভিক্টোরিয়া এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল। ফিফার ভলান্টিয়ার সে। মস্কোর কাজানস্কি রেল টার্মিনালে দায়িত্ব পালন করে। সন্ধ্যা থেকে সকাল। প্রায় ১২ ঘণ্টা। কিন্তু বাংলা ভাষাটা তুমি বুঝলে কী করে? ‘আমার বাবা বাংলা জানেন।’ তাহলে কী তোমার বাবা বাংলাদেশি? ‘না, না। তিনি আর্মেনিয়ান। আমার মা রাশিয়ান।’ ভিক্টোরিয়া জানাল, বাংলা ভাষাটা তার বাবা সের্গেই শিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষাটা কেন শিখলেন তিনি? এই ভাষা শেখার মধ্যে একটা গৌরব আছে যে! ‘তোমরাই তো ভাষার জন্য লড়াই করেছ। গুলি খেয়েছ। জীবন বিলিয়ে দিয়েছ।’ ভিক্টোরিয়ার মুখ থেকে কথাগুলো শুনতে শুনতে সত্যিই অনেকটা  পেছনে চলে গিয়েছিল মন। যেখানে রফিক-জব্বাররা ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান তুলেছিল। অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। ভাষা সৈনিকরা কারাবন্দী হয়েছিল। রাশিয়া বিশ্বকাপ একটা ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে ষোলোটা দল নতুন পথে চলতে শুরু করবে। কেউ বাড়ির পথ ধরবে, কেউবা ছুটে যাবে বিশ্বকাপের সোনার হরিণের দিকে। সেসব তো পরে হবে। টিকিট হাতে নিয়ে আগে সমর্থকরা ছুটে চলেছে প্রিয় দলগুলোর দিকে। মস্কো থেকে বিশ্বকাপ শহরগুলো অনেকটা মাকড়সার জাল তৈরি করেছে যেন। শেষ ষোলোর ম্যাচগুলো হবে কাজান, সামারা, নিঝনি নভগরদ, সোচি, সেন্ট পিটার্সবার্গ আর মস্কোতে। মাকড়সার এই জাল ধরেই সমর্থকের দল ছুটল বিভিন্ন শহরে। কিন্তু বাহন কোথায়? প্লেনে টিকিট নেই। যদিওবা আছে, কেনার সামর্থ্য নেই। ট্রেন কিংবা বাস, কোনোটারই টিকিট নেই। তাহলে উপায়! সমর্থকরা ছুটল ভাড়া করা মাইক্রো নিয়ে। কিন্তু পথ যে বহুদূরের! কোনো কোনো পথ কয়েক হাজার কিলোমিটারেও শেষ হয় না। অনেক সমর্থকই ম্যাচ টিকিট নিয়ে তাই দাঁড়িয়ে রইল স্টেশনে স্টেশনে। মোটাসোটা এক আর্জেন্টাইন দেখতে পেয়েই বলল, ভাই একটা টিকিটের ব্যবস্থা করে দাও না। ম্যাচের টিকিট নয়, বাস কিংবা ট্রেনের টিকিট। সান্তিয়াগো নামের সেই আর্জেন্টাইন কাজান পৌঁঁছার জন্য কাঁদো কাঁদো স্বরে যাকে তাকে ধরেই এভাবে সাহায্য চাচ্ছিল। মস্কোতে আজ মুখোমুখি হবে স্পেন-রাশিয়া। এ কারণে রাশিয়ানদের স্রোতটা এখন মস্কোগামী। বিশ্বকাপের অন্যান্য দলের সমর্থকরা যখন মস্কো ছাড়ছে, রাশানরা মস্কোতে ভিড় জমাচ্ছে। রেড স্কয়ারের চত্বরে তারা স্থানে স্থানে কনসার্ট করছে। গানের তালে তালে নেচে-গেয়ে বিনোদন দিচ্ছে ভিনদেশিদের। রাশান সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরছে এই নাচ-গানে। রাশানদের মধ্যেও অনেক জাত আছে। তাতার, কুবান আরও কত কী! সব জাতির সংস্কৃতিরই দেখা মিলে রেড স্কয়ারে। রাশান সংস্কৃতির খুব গভীরে কোথাও যেন মিশে আছে বাংলাও। নাহলে কী আর ভিক্টোরিয়া বাংলাটা শুনেই বুঝতে পারে! নাহলে কী আর সের্গেইয়ের মতো লোকেরা শখ করে বাংলা ভাষাটা শিখে নেয়!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর