রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
কোটা সংস্কার

আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

ক্লাস বর্জনের ডাক

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে গতকাল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ ছয়জন আহত হয়েছেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এ হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ হামলার প্রতিবাদে দেশের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও অবরোধ কর্মসূচির পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন। হামলা ঘটনার পর ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলায় আহত নুরুল হক নূরসহ আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, আহতরা হলেন নুরুল হক নূর (২৫), আবদুল্লাহ (২৩), আতাউল্লাহ (২৪), মাহফুজ (২৫), শাহেদ (২৫), হায়দার (২৩)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটা বাতিলের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আড়াই মাস পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারির কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতির জন্য গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন আন্দোলনকারীরা। সেই সংবাদ সম্মেলন প্রতিহত করতে ১১টার আগেই ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী সেখানে অবস্থান নেন। ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে সংবাদ সম্মেলনের জন্য আন্দোলনকারীদের একটি দল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আসে। এরপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ‘শিবির ধর’ ‘শিবির ধর’ বলে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় নুরুল হক নূরকে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকেন তারা। পরে শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লাইব্রেরিতে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ছাড়া লাইব্রেরির সামনে রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে আরও কয়েকজন আন্দোলনকারীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় কিছু আন্দোলনকারী লাইব্রেরিতে গিয়ে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গ্রন্থাগারিক তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. এস এম জাভেদ আহমেদের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন নূর। তখন জাবেদ আহমেদও হামলাকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এ প্রসঙ্গে জাভেদ আহমেদ বলেন, ‘আমি নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আমার ওপরও চড়াও হয়েছে। আমার হাতের তালু কেটে গেছে।’ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে আমরা গ্রন্থাগারের সামনে আসি। আমরা দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। এতে আমাদের অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। আহতদের মধ্যে যুগ্ম-আহ্বায়ক নূরের অবস্থা গুরুতর। হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর পিস্তল ও রামদা নিয়ে হামলা চালায়। আমাদের অগণিত কর্মী আহত হয়েছেন। আমরা তাদের কাছে এটা প্রত্যাশা করিনি। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ছাত্রলীগ কোনো হামলা চালায়নি।

ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা শুনেছি আন্দোলনকারীদের দুই গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ঈদের ছুটি শেষে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ অবস্থায় তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস আবারও উত্তাল হবে বলে মনে করছেন তারা। এ হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন ঢাবির বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাদা দলের শিক্ষকরা। গতকাল সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়। রাবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা বাতিলের ঘোষণার প্রজ্ঞাপন দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহীর সব ধরনের পরিবহন অবরোধ করা হবে জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছি। শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। তাঁর সেই ঘোষণার দুই মাস অতিবাহিত হলেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। অথচ সেই ঘোষণার পর নতুন নাটক শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শোনা যাচ্ছে কোটা নাকি সংস্কার/বাতিল কিছুই হবে না। তবে আমরা কখনোই কোটা বাতিল চাইনি। আমরা সংস্কার চেয়েছি। তবে প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই ঘোষণার প্রজ্ঞাপন দাবিতে শনিবার সকালে যখন কেন্দ্রীয় কমিটি সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছিল তখন ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা পাঁচ-সাতজন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীকে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে। এই অবস্থায় আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা যানবাহন অবরোধের ডাক দিচ্ছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বিচার ও কোটা সংস্কার না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের ধর্মঘট চালিয়ে যাব।

সর্বশেষ খবর