বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোনার মান যাচাইয়ে তৃতীয় পক্ষের খোঁজ

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বললেন, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে গচ্ছিত সোনার মান যাচাই করা হবে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে। আর সোনার মান ও ক্যারেট কমে যাওয়া নিয়ে যে অভিযোগ এসেছে সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আগে সোনার মান যাচাই করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বর্ণকার কিংবা শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মেশিন নয়, তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে মান যাচাই করা হবে। ব্যাংক খাতের অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি যেন মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি না হয়, সেজন্য নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। গতকাল সচিবালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ মুহূর্তে দেশের বাইরে রয়েছেন। বৈঠক শেষে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, সোনার মান খোয়া যাওয়া বা ভল্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যদি কারও গাফিলতির প্রমাণ মেলে, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও শুল্ক গোয়েন্দা তাদের নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও একে করণিক ভুল বলে বৈঠকে তথ্য তুলে ধরেছে। তবে শুল্ক গোয়েন্দার কর্মকর্তারা বলছেন, তারা একাধিকবার যাচাই করেছেন। এমনকি খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তারা সোনার মান যাচাই করেছেন। এ ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে তৃতীয় পক্ষকে নিয়োগ দিতে অর্থমন্ত্রীর দেশে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে। এদিকে বৈঠক শেষে অর্থ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা নিয়ে অনিয়মের খবর যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, এটা পুরোপুরি সঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতিতেই এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা বিষয়টিকে ছোট করে দেখছি না। পর্যালোচনা করে কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জরুরি ওই বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, এনবিআরের সদস্য কালিপদ হালদার, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম, কাস্টমস কার্যক্রম মূল্যায়ন ও অডিট কমিশনার ড. মইনুল খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জমা রাখার সময় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেওয়া সোনা ৪০ শতাংশই ছিল। কিন্তু ইংরেজি-বাংলার হেরফেরে তা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ৮০ ও ৪০-এ ক্লারিক্যাল মিস্টেক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভল্টে ছয় স্তরের নিরাপত্তা আছে। কোনো সোনা বাইরে যায়নি। জনগণের সম্পদ রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। তাই টোটাল নিরাপত্তা সিস্টেমটা পর্যালোচনা করে ঢেলে সাজানো হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।’ তিনি বলেন, কাজ করলে কিছু ধারণাগত তফাত হতে পারে। সব সোনা ঠিক আছে। ঘরেই আছে। ৪০ ক্যারেট আর ৮০ ক্যারেট নিয়ে ভুল হতেই পারে। আগে সোনা মাপা হতো মান্ধাতার আমলের নিক্তি দিয়ে। এখন আধুনিক পরিমাপক দিয়ে মাপা হয়। তাতে দশমিক ০০০০১ কমবেশি হয়। অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরলে বিষয়টি সম্ভাব্য সব উপায়ে খতিয়ে দেখা হবে। গত দুই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এনবিআরের চিঠি চালাচালি হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমলাতান্ত্রিক গাফিলতি আছে। লিখিত চিঠির জবাব এসেছে দেড় মাস পর। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর দুই প্রতিষ্ঠানেরই গাফিলতি রয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন কমিটি হবে তা এখনই বলছি না। তবে তদন্ত বা পর্যালোচনা কমিটি, যে ফরম্যাটেই হোক একটা কমিটি হবে।’

সর্বশেষ খবর