শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার মালিক-শ্রমিকের হাতে জিম্মি মানুষ

অঘোষিত ধর্মঘটে জনদুর্ভোগ চরমে ♦ দূরপাল্লায় চলেনি বাস, ঢাকায়ও কম ♦ নিরাপত্তার অজুহাত মালিকদের

শিমুল মাহমুদ

এবার মালিক-শ্রমিকের হাতে জিম্মি মানুষ

পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে যানবাহনশূন্য রাজধানীর যাত্রাবাড়ী। (বামে) রাজধানীর মগবাজারে বাসচাপায় নিহত মোটরসাইকেল আরোহীর স্বজনের কান্না। ঘাতক বাসটি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। যানবাহনের নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন মালিক সমিতির হঠাৎ সিদ্ধান্তে সারা দেশে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর সঙ্গে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। রাজধানীতে সরকারি বিআরটিসির হাতে গোনা কিছু বাস ছাড়া গণপরিবহন রাস্তায় নামেনি। এমনকি যানবাহনশূন্য রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় সকালের দিকে রিকশা চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় সারা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনে গতকালও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। তবে গতকাল ছুটির দিনে রাস্তায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল কম। ছুটির দিনের ফাঁকা রাস্তায়ও চালকদের দায়িত্বহীনতা থেমে নেই। দুপুরে মগবাজার ওয়ারলেস গেট এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল চালক মারা গেছেন। জনতা বাসচালককে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে ও বাসটি পুড়িয়ে দেয়। বিকালে ধামরাইয়ে দুই বাসের সংঘর্ষে তিনজন মারা গেছেন। এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, ‘দেশে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু সড়কে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা যখন নিরাপদ বোধ করব তখন রাস্তায় গাড়ি নামাব। তবে এটা আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি নয়।’ গতকাল বিকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ দাবি করেন, এ পর্যন্ত চার শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সেজন্যই রাস্তায় যানবাহন নামছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা আইন মেনে গাড়ি চালাতে চালকদের নির্দেশ দিয়েছি। আইন অনুযায়ী দোষীদের শাস্তি আমরা মেনে নেব। নতুন আইনকে আমরা স্বাগত জানাই।’ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে এনায়েত উল্যাহ তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্ঘটনায় নরহত্যার জন্য বাসচালক ও তাদের সহকারীর মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজার বিধান রেখে যে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া করা হয়েছে তার প্রতিবাদে গতকাল থেকে সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকরা। সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধের ডাক দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সড়ক পরিবহন আইনটি আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনেই আইনটি পাসের চেষ্টা করছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগের কারণেই নিরাপত্তার অজুহাতে সারা দেশের পরিবহন বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি। এর আগেও তারা হঠাৎ ধর্মঘট ডেকে সরকারকে বিভিন্ন উপায়ে চাপ দেয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন হবে মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ বৃহস্পতিবারই পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। একই দিন গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন পরিবহন নেতারা। তাদের চাপেই এক বছরেরও বেশি সময় ভেটিংয়ের নামে ঝুলে থাকে আইনটির অনুমোদন প্রক্রিয়া। এর আগে গত বছরের ২৭ মার্চ প্রস্তাবিত নতুন আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তখনো দেশজুড়ে কর্মবিরতিতে যান শ্রমিকরা। এ আইন বাতিলের দাবিতে শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের সব জেলায় বাস, মিনিবাস, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। একই পদ্ধতিতে গতকাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকরা। মালিক সমিতি বলেছে, ভাঙচুরের ভয়ে চালক-হেলপাররা রাস্তায় গাড়ি বের করছেন না। তবে এ নিয়ে সাধারণ মানুষ বলছে, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে চালকদের রাস্তায় কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে বলছেন, পরিবহনকর্মীরা কি আইন মানতে রাজি নন?

এর আগেও গত বছরের এপ্রিলে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বৈধতা আদায় করতে যানবাহনের কৃত্রিম সংকট করেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। মানুষের দুর্ভোগের কারণে বিআরটিএর অভিযান তখন বন্ধ করা হয়। যাত্রী জিম্মি করে সিটিং সার্ভিসের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান পরিবহনকর্মীরা। এর জেরে বিআরটিএর পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের ২ মে। তখন ২৬টি সুপারিশ জমা দেন ওই কমিটির সদস্যরা। একই কায়দায় এবারও মানুষকে দুর্ভোগে ফেলার কৌশলে নেমেছেন পরিবহন নেতারা। ঢাকার টার্মিনালগুলো থেকে আন্তজেলা বাস ছাড়েনি গতকাল সকাল থেকে। তবে সন্ধ্যার পর দেশের বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে সীমিত আকারে বাস চলাচলের খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকায় ভোগান্তি চরমে : নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে টানা পাঁচ দিন আন্দোলনের পর গতকাল ছুটির দিনে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকটে ভোগান্তি বেড়েছে। প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তাদের অটোরিকশা ও রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়েছে। সকালে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে কোনো বাসের দেখা না মিললেও হাতে গোনা কিছু অটোরিকশা ও রিকশা চলছিল। ধানমন্ডিতে কোনো বাস চোখে পড়েনি। মেরুল-বাড্ডায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশলী সুজন মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রামপুরা ব্রিজ থেকে উত্তর বাড্ডায় আত্মীয়ের বাসায় যেতে আধঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে হেঁটেই রওনা হন এনজিও কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম। উত্তরা থেকেও কোনো বাস চলাচল করেনি।

গুলিস্তান থেকে নতুন বাজার রোডে চলাচলকারী বন্ধু পরিবহনের চালকের একজন সহকারী জানান, গাড়ি বের না করতে বৃহস্পতিবার রাতেই মালিকরা নিষেধ করে দিয়েছেন। মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটের মৈত্রী পরিবহনের মালিক মো. মজনু বলেন, নিরাপত্তার কারণে ও শিক্ষার্থীদের অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ির ফলে ঢাকায় সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এয়ারপোর্ট-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনের এমডি বাবুল শেখ বলেন, চালকরা আসছেন না বলে বাস নামাতে পারছেন না তারা। তিনি বলেন, ড্রাইভারদের অনেককেই মারধর করা হয়েছে। তাদের টাকাপয়সা পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এ কারণে তারা ভয়ে গাড়ি নামাচ্ছেন না।

যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ানো ঠিক হচ্ছে না : ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেছেন, সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ানো ঠিক হচ্ছে না। পরিবহন মালিকদের উচিত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা। তিনি বলেন, তাদের যদি নিরাপত্তা সংকট থাকে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বসতে পারে। তাদের সহযোগিতা নিতে পারে।

বেনাপোলে শত শত যাত্রী আটকা : শুক্রবার সকাল থেকে বেনাপোলে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহনসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভারত থেকে আসা শত শত দেশি-বিদেশি যাত্রী আটকা পড়েছেন বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকায়। যাত্রীরা শুয়েবসে অলস সময় কাটাচ্ছেন পরিবহন কাউন্টারে। বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীসহ শিশু ও নারীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি যাত্রীরা বলেন, অপরাধ করেছেন চালকরা, আবার তারাই বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন। বাস চলাচল না করার কারণে তারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এদিকে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে সারা দেশে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর—

রাজশাহী : আন্তজেলা ও দূরপাল্লার সব বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন রাজশাহীর পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। তাদের দাবি, বাস ভাঙচুরের আশঙ্কায় গতকাল সকাল থেকে রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির বাসগুলো নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী চলাচল করছে।

বরিশাল : ভাঙচুরের আশঙ্কায় বরিশাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের দূরপাল্লার সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বরিশালের বাস মালিক সমিতির নেতারা। গতকাল সকাল ৮টার পর থেকে কেন্দ্রীয় বাস মালিক সমিতির আহ্বানে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়। এর ফলে চরম বেকায়দায় পড়েন যাত্রীসাধারণ। বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সূত্র জানান, সকালে বরিশাল থেকে দূরপাল্লার একটি যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে গেলেও মোস্তফাপুরে বাসটি আটকে দেন সেখানকার পরিবহন মালিক সমিতির লোকজন। এর পর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে বরিশাল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

রংপুর : রংপুর থেকে সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে দূরপাল্লাসহ অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো বাস ছাড়েনি। এতে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। কাদের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবু আজগর আহমেদ পিন্টু বলেন, ‘বাস বন্ধের ব্যাপারে আমাদের সমিতির সঙ্গে কেউ কথা বলেননি। তবে আমরা যেটা ধারণা করছি, নিরাপত্তার কারণেই হয়তো চালকরা বাস চালাচ্ছেন না।’

খুলনা : খুলনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। গতকাল সকাল ১০টায় এ ধর্মঘট শুরু হয়। এ সময় সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, রয়্যালের মোড় ও শিববাড়ী মোড়ের অনেক কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

সিলেট : সিলেট কেন্দ্রীীয় বাস টার্মিনাল ও কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে গতকাল দিনভর দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সিএনজি অটোরিকশা চলাচলেও বাধার সৃষ্টি করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে শত শত মানুষকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

বগুড়া : বগুড়া থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকাগামী বাস চলাচল করছে রাতে। দিনে নিরাপত্তার কথা বলে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন বাস শ্রমিক ও চালকরা। এ ছাড়া অন্যান্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বাস চলাচল করছে সীমিত আকারে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাস মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের স্বার্থে বাস চালু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

মাদারীপুর : মাদরীপুরে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকরা। তারা দুপুর ১২টার দিকে মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদ করেছেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জেও বাস, ট্রাক, লরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে হবিগঞ্জ পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সকালে হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দেশের কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি। ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সজীব আলী জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাস, ট্রাক, লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। এদিকে হবিগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জেলা মোটর মালিক গ্রুপ। ফলে সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণসহ আন্তজেলার সব সড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় ধর্মঘটের এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ফেনী : ফেনী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে গতকাল ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তবে বিকাল ৫টার পর এসব রুটে পুনরায় বাস চলাচল শুরু করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, বাস ও চালকদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা : সারা দিনে গতকাল চুয়াডাঙ্গা থেকে কোনো রুটে যাত্রীবাহী কোনো বাস-মিনিবাস চলাচল করেনি। চুয়াডাঙ্গা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রিপন মণ্ডল জানান, চুয়াডাঙ্গা রয়েল পরিবহনের দুটি গাড়ি মুজিবনগর থেকে চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে পটুয়াখালী যাতায়াত করছিল। সম্প্রতি ঝিনাইদহ সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা রয়েল পরিবহনের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা রয়েল পরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন এবং ঝিনাইদহে থাকা রয়েল পরিবহনের ঢাকাগামী দুটি কাউন্টার বন্ধ করে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ মহাসড়কসহ চুয়াডাঙ্গা জেলার সব রুটে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

সিরাজগঞ্জ : রাস্তায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণসহ সব রুটে বাস-ট্রাক-সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে পুরো সিরাজগঞ্জ। এতে সাধারণ মানুষ ছাড়াও পণ্য পরিবহনও বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাগেরহাট : বাগেরহাটে অনির্দিষ্টকালের দূরপাল্লার পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। ফলে গতকাল দ্বিতীয় দিনে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকার গাবতলী টার্মিনালগামী দূরপাল্লার সব পরিবহন চলাচলা বন্ধ থাকে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। তবে জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

নোয়াখালী : নোয়াখালী থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

নাটোর : নাটোরেও বাস বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিকরা। সকাল থেকে এই অঘোষিত ধর্মঘটে ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে নাটোর ছিল বিচ্ছিন্ন। সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ বা ঢাকাসহ দূরপাল্লার রুটে কোনো বাস নাটোর থেকে ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিসহ মহাদুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।

চাঁদপুর : সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল সকাল থেকে চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-কুমিল্লা, চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, চাঁদপুর-সিলেট, চাঁদপুর-খাগড়াছড়ি, হাজীগঞ্জ-ঢাকা, ফরিদগঞ্জ-চট্টগ্রাম, মতলব-ঢাকা, কচুয়া-ঢাকাসহ আরও কিছু রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সব রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে গতকাল সকাল থেকে জেলা শহরের ঢাকা বাস টার্মিনাল, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মহানন্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে বাস চলাচল বন্ধ রাখার ব্যাপারে আগাম কোনো মাইকিং না করায় দূরদূরান্ত থেকে আগত শত শত যাত্রী বাসস্ট্যান্ডে এসে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা রুটে সকল প্রকার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে আঞ্চলিক সড়কে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, শ্রমিক ও মালিকদের জানমালের নিরাপত্তা নেই তাই ফেডারেশনের নির্দেশে টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ধরনের দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর