শিরোনাম
শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছুটির দিনেও রাজপথে শিক্ষার্থীরা

ছেলেমেয়েদের কিছু হলে রাস্তায় নামব অভিভাবকদের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছুটির দিনেও রাজপথে শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর মিরপুরে গতকাল ছুটির দিনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন তাদের অভিভাবকরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ছুটির দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। সেই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গত বৃহস্পতিবার হামলার প্রতিবাদে এবার রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন অভিভাবকরাও। গতকাল ঢাকার কয়েক জায়গায় সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকদেরও দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের মতো ব্যাপক আকারে না হলেও ষষ্ঠ দিনে মিরপুর, শাহবাগ, আসাদগেট, উত্তরা, রায়েরবাগ সড়কে শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানানো হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী জড়ো হলেও তাদের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, আড়ং ও আসাদগেট এলাকায় অবস্থান নেয় কয়েকশ শিক্ষার্থী। তাদের কেউ মানববন্ধন করছিল, আবার অনেককে সড়কে নেমে গাড়ির কাগজপত্র চেক করতে দেখা গেছে। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। সকালে কিছু শিক্ষার্থী মিরপুর-১ নম্বরে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করে। সনি সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ ছাড়া সড়কে নেমেও গাড়ির শৃঙ্খলা ও লাইসেন্স দেখেন অনেক শিক্ষার্থী। বেলা পৌনে ১২টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবস্থান নেয়। এর মধ্যে মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউবিটি, বিসিআইসি কলেজের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। মিরপুর ১০ নম্বরে আসা অনেক শিক্ষার্থীই ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করছিলেন, অনেকে আবার পথচারীদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের। পরামর্শ দিচ্ছেন মোটরসাইকেলের দুই যাত্রীকেই হেলমেট ব্যবহারের। সেইসঙ্গে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে শ্যাওড়াপাড়া, ১০ নম্বর থেকে ১৩ নম্বরের রাস্তায় এক লেনে রিকশা, অপর লেনে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে তারা। এ ছাড়া মিরপুর শ্যাওড়াপাড়ায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসের সামনে রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করেন। এই এলাকার ভাঙাচোরা রাস্তায় যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় এজন্য তারা দুই লেনে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করেন। আবার হঠাৎ কোনো রোগীবাহী গাড়ি আসলে তা দ্রুত চলে যাওয়ার ব্যবস্থাও করছিলেন তারা। উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার মাসকট প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পুলিশের উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহেদ ফেরদৌস জানান, বেলা ১২টার দিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হাউস বিল্ডিংয়ের সামনে এসে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করে ফিরে যায়। তাদের মানববন্ধনের পর এ এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অপরদিকে মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকায় পরিস্থান পরিবহনের একটি গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় একদল শ্রমিক। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে ধর্মঘট ডেকেছে মালিক সমিতি। তাই কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। তবে মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) লিটন কুমার সাহা জানান, মালিক সমিতি এখনো ধর্মঘট ডাকেনি। তারা ডাকতে চাইলে আমরা তাদের না করেছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকরা গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে পারে।

অভিভাবকদের মাঠে নামার হুমকি : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে এবার মাঠে নামার হুমকি দিলেন অভিভাবকরাও। নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা আন্দোলনে ষষ্ঠ দিনের মতো গতকালও রাস্তায় নামে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে মানববন্ধন করেন মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। মিরপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও অজ্ঞাত কিছু যুবকের হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক অভিভাবককে অংশ নিতে দেখা যায়। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও পরিবহন খাতে ঘুষ, দুর্নীতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধসহ শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানানো হয়। শামীম আরা নিপা নামের এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের বাচ্চাদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে আমরা শঙ্কিত। নতুন করে কোনো বাচ্চার ওপর আঘাত করা হলে আমরাও রাস্তায় নামব। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অন্যরা বলেন, যৌক্তিক দাবিতে আমাদের সন্তানরা আন্দোলন করছে। তাদের ওপরে হামলা হলে আমরা ঘরে বসে থাকব না। দাবি মানার কথা সরকার মুখে বললে হবে না। আগেও অনেক দাবি পূরণের কথা শুনেছি, কিন্তু তা আজও ঝুলে আছে। সুতরাং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক : সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৩ দফা এবং নিরাপদ সড়কের জন্য ৯ দফা দাবিতে সারা দেশে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হবে না এবং কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাড়ি চলাচল করবে না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ঢাকার মিরপুর, দনিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে দেশব্যাপী ছাত্রধর্মঘট ঘোষণা করা হলো। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ধর্মঘট কর্মসূচিতে দেশের সব সচেতন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিকদের অংশগ্রহণ করার অনুরোধ করছি’।

এ সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের স্বাক্ষর করা একটি বিজ্ঞপ্তি বিলি করা হয়। এতে সরকারকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৯ দফা, হামলাকারীদের বিচার এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৩ দফা দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর