বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রানজিট এখনো ঢাকা

সাখাওয়াত কাওসার

সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধে অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হন। কিন্তু এ কার্যক্রম কিছুদিন চলার পর ঝিমিয়ে পড়ে। এখন আর সেভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আগের সেই তৎপরতা নেই। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেশের নানা প্রান্তে ইয়াবা ব্যবসায়ী-ক্রেতারা আগের মতোই সক্রিয়। বন্দুকযুদ্ধও রুখতে পারেনি ইয়াবার রাজত্ব।

নিত্যনতুন অভিনব কৌশলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মাদকের কুশীলবরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাপক ধরপাকড়ের পরও মাদক পাচারের ট্রানজিট হিসেবে এখনো রাজধানীকেই ব্যবহার করছে গডফাদাররা। প্রতিদিনই দূরপাল্লার বাসে কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ঢাকায় ব্যাপক হারে আসছে মরণনেশা ইয়াবা। এরপর হাতবদল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য। বলা হয়েছে, অনেক মাদক ব্যবসায়ী কারাগারে কিংবা কেউ কেউ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তাদের শূন্যস্থান এরই মধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। তবে এরই মধ্যে দূরপাল্লার পরিবহন মালিকদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলে র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, বিশেষ অভিযানের মধ্যেও মাদক কারবারিরা থেমে নেই। তারা এখন দূরপাল্লার বাসসহ বিমানেও মাদক পাচার করছে। তবে অপরাধীরা যতই তৎপর হওয়ার চেষ্টা করুক না কেন তাদের ধরা পড়তেই হবে। একাধিক সূত্র বলছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে নাদিম ওরফে পঁচিশ এবং মিরপুরের চলন্তিকা বস্তির নজরুল সরদার ওরফে নজু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও বর্তমানে সেখানে অনেকটা আগের মতোই চলছে মাদক কারবার। চলন্তিকা বস্তিতে নজুর জায়গা নিয়েছে এখন সাগর নামের একজন। অনেক জায়গায়ই মাদক দমনের নামে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ সদস্য এর মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। অভিযানের খবরও তারা আগেই পৌঁছে দিচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে। র‌্যাব সূত্র জানায়, হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনসহ কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসা দূরপাল্লার বাসে ইয়াবা পাচারের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে ওই সব বাসের চালক, হেলপার, কন্ডাকটরসহ অন্তত ২০ জন ধরা পড়েছে। যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বিভিন্ন কাভার্ড ভ্যানেও আনা হচ্ছে ইয়াবা। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে শ্যামলী পরিবহনে ইয়াবার বড় চালান আসার খবর পেয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ওই বাসটি থামিয়ে তল্লাশি চালায় র‌্যাব। চালকের সিটের নিচে লুকিয়ে রাখা সাত হাজার পিস ইয়াবাসহ আবদুল হালিম শেখ ও তার সহকারী রনি মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তারা র‌্যাবকে জানায়, কক্সবাজার-ঢাকা, টেকনাফ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বাসগুলোতে তারা ইয়াবার চালান বহন করে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু তারাই নয়, অন্য অনেকে একই পদ্ধতিতে ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছে ইয়াবা। বিনিময়ে প্রতি ট্রিপে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাচ্ছে তারা। এর আগে ৬ জুন সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার একটি পেট্রলপাম্পের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে অভিযান চালিয়ে ৩৩ হাজার ৫৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ বাসচালক মো. শুক্কুর (৪৪) ও তার সহকারী মো. ফারুককে (২৯) গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭ এর একটি দল। ২২ জুন রাতে রাজধানীর রূপনগর এলাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জিয়াউর (২৭) ও সহকারী আমিনুল ইসলাম মিলনকে দুই হাজার ৪০১টি ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেন র‌্যাব ২-এর সদস্যরা। এ সময় বাসও জব্দ করা হয়। বাসটি ঢাকা-কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে চলাচল করত। শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, এ ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। তবে শ্যামলী পরিবহনের চালকদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হয়, তারা যেন কোনো অপরাধে না জড়ান। তিনি বলেন, এখানে অনেকে পাঁচ-দশ বছর ধরে চাকরি করছেন। সবাই প্রফেশনাল। কিন্তু এর মধ্যে কে কে গোপনে অপরাধে যুক্ত হচ্ছে তা চিহ্নিত করা মুশকিল। একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে মাদক কারবারিদের তৎপরতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। কারণ ওই সময়টাতে প্রশাসনের নজরদারি থাকবে নির্বাচনের দিকে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শ্যামলী, হানিফ, গ্রিনল্যান্ডসহ আরও যেসব বাস ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে চলাচল করে, এর বেশির ভাগেই ইয়াবা বহন করা হয়। এসব বাসের হেলপার, কন্ডাকটর, এমনকি চালকও মাদক কারবারে জড়িত। হাতেনাতে এর প্রমাণও মিলেছে। মাঝখানে এক দিন বিরতি দিয়ে শ্যামলী পরিবহনের দুটি বাসে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার হয়। এ নিয়ে বাসমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। মালিকপক্ষের সঙ্গে র‌্যাবের বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, বিশেষ অভিযানের কারণে মাদকের পরিমাণ কমলেও তা থেমে নেই। এখনো রাজধানীকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর