বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুক্তফ্রন্টে নয়, সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্যের পথে ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তফ্রন্টে নয়, সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্যের পথে ড. কামাল

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জামায়াতে ইসলামীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে মাঠে নেমেছেন। তিনি কেবল যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য গড়তে আগ্রহী নন, এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপিসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলোকেও সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় অনুঘটকরা  দৃশ্যমান নন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণফোরামের সমাবেশ থেকে জাতীয় ঐক্যের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন ড. কামাল হোসেন। ওই সমাবেশে বৃহত্তর ঐক্যের অভিপ্রায়ে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় ডাকা হতে পারে। যদিও সরকারি দল আওয়ামী লীগ থেকেও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি বাম দলকে মহাজোটে যুক্ত করার একটা চেষ্টা আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড. কামাল হোসেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২২ সেপ্টেম্বর সমাবেশের অনুমতি এখনো পাননি। দিন কয়েকের মধ্যে অনুমতি না পেলে তিনি অনুমতির জন্য ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেবেন। এর মধ্যেও সমাবেশের অনুমতি না পেলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন তিনি। দায়িত্বশীল নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, সরকারের পদত্যাগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে এই ঐক্য প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশের দিন কয়েক আগে ওই সমাবেশ থেকে কী কর্মসূচি ঘোষণা করা যায় তা ঠিক করা হবে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসভবনে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে যে বৈঠক হয় তা ছিল নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে জাতীয় ঐক্যকে ত্বরান্বিত করা।  এটা তারা করতে সমর্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য ঐকমত্য হয়। যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। সভা, সমাবেশ ও প্রচারণার মাধ্যমে তারা সবাইকে একতাবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই ঐক্যে জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  বৈঠকে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন।

সেপ্টেম্বরে বি. চৌধুরীর বাসায় যাবেন ড. কামাল : ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আবারও বৈঠকে বসবেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। আগামী মাসের প্রথম দিকে বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সাত দফার আলোকে অভিন্ন কর্মসূচি ঠিক করতে এ সময় বৈঠক করবেন চার সদস্যবিশিষ্ট সাব-কমিটির সদস্যরা। যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই পক্ষের নেতারা। তারই অংশ হিসেবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণতন্ত্র এবং নির্বাচন’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছে জেএসডি।

পরদিন ২ সেপ্টেম্বর কৃষিবিদ মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করবে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। দুটি অনুষ্ঠানেই বক্তব্য রাখবেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ড. কামাল হোসেন যে নাগরিক সমাবেশ আহ্বান করেছেন, সেখানে যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের নেতারা ছাড়াও বিএনপি নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গণফোরাম সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী বাদে প্রায় সব দলকেই নাগরিক সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর