শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন

রাজধানীর সব খাল ফিরিয়ে দেব

নিজামুল হক বিপুল

রাজধানীর সব খাল ফিরিয়ে দেব

খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর দায়িত্বে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই থেকে। তার আগে ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্বে। ফরিদপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর পাল্টে গেছে এই মন্ত্রণালয়ের চিত্র। মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে এসেছে গতি। তার নেতৃত্বেই এখন চলছে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, পল্লীর দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যক্রম। নগরীকে দীর্ঘ জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি দিতে মন্ত্রীর উদ্যোগেই নেওয়া হয়েছে দখল হয়ে যাওয়া খাল পুনঃখনন থেকে শুরু করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নানান কর্মকাণ্ড নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। কথা বলেছেন আগামী নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে।

প্রশ্ন : আপনার মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় ভূমিকা তো গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে। বিশেষ করে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে বিরাট পরিবর্তন এনেছে আপনার মন্ত্রণালয়। এ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন : গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন এই মন্ত্রণালয়ের একটা বিরাট কাজ। আমাদের এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিন লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটারের অধিক রাস্তা রয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায়, ইউনিয়নে এই রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে তিন লাখ ৩৫ হাজার কিলোমটার পাকা রাস্তা আছে। এই ব্যাপক সংখ্যক রাস্তাঘাটের নরমাল মেইন্টেনেন্স করতে গেলে আমাদের বিরাট অংশ মেইন্টেনেন্স করতে হয়। সারা বাংলাদেশে এই রাস্তার নেটওয়ার্কটা ছড়ানো। আমি যদি তুলনা করি তাহলে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের অধীনে রাস্তা আছে ২২ থেকে ২৩ হাজার কিলোমিটার। সেই তুলনায় তিন লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা অনেক বেশি। আর আমাদের এসব গ্রামীণ অবকাঠামোগুলো একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। গত বছরের বন্যায় আমাদের রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব রাস্তা মেরামতের জন্য আমরা চার হাজার কোটি টাকার একটা মেইন্টেনেন্স প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছি। আর এই রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য আমাদের নরমাল যে প্রোগ্রাম রয়েছে তাতে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার একটা বরাদ্দ রয়েছে। আমি আজ (বুধবার) সকালেই এই বরাদ্দকে চার হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেছি। যাতে বিশেষ করে রাস্তাঘাটগুলো মেরামতের আওতায় আসে এবং জনগণ এই সুবিধা পায়।

 

প্রশ্ন : ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা একটা বিরাট সমস্যা। আপনি গত বছর বলেছিলেন, আমাকে সময় দেন আগামী বছর তিন ঘণ্টার অধিক পানি থাকবে না।

মোশাররফ হোসেন : জলাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে এটা আমি একবারও বলিনি। গত বছর জলাবদ্ধতার পর আমি বলেছিলাম আমাকে তিন ঘণ্টা সময় দেন জলাবদ্ধতা থাকবে না। এ বছর বর্ষায় তিন ঘণ্টার অধিক পানি কোনো সময় ছিল না। তবে বৃষ্টির ইনটেনসিটি বেশি ছিল। আরেকটা কারণ আছে, উন্নয়নের কাজ যথেষ্ট পরিমাণ চলতেছে। যার কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই বছর আমরা দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩টি খাল পুনঃখনন করেছি। যাতে পানি নিষ্কাশনের কাজটা আরও দ্রুতভাবে সম্পন্ন হয়। আমরা ভবিষ্যতে আরও ২২টি খালের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করব। যেটা ঢাকা ওয়াসার মাধ্যমে হবে। এই ধরনের কাজ অতীতে কোনো সময় হয় নাই। এই যে ৪৫টা থেকে ৫০টা খাল ঢাকার মধ্যে আছে, প্রত্যেকটা খালই পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, জবর দখল হয়ে গেছে এবং পারমানেন্ট স্ট্রাকচারও কোনো কোনো খালের ওপর উঠছে। এসব অবৈধ স্থাপনা আমরা দূর করব এবং এসব খালকে তার পুরনো অবস্থায় আমরা ফেরত দেব। এ জন্য একটা মাস্টারপ্ল্যান আমরা গ্রহণ করছি।

প্রশ্ন : নগর সরকারের দাবি দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা আপনাদের সরকারের আছে কিনা? থাকলে সেটা কোন পর্যায়ে আছে?

মোশাররফ হোসেন : এখন নগর সরকারের কনসেপ্ট তো বিভিন্ন ধরনের। তারা যেসব দাবি করতেছেন যে, পুলিশ, প্রশাসন, বিচারবিভাগ সব তাদের হাতে দিয়ে পরিপূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ করার। তাদের এ দাবি সঙ্গত। অনেক মেট্রোপলিটন সিটিতে এই ক্ষমতা দেওয়া আছে। যেমন লন্ডন সিটিসহ বিশ্বের অন্যান্য ডেভেলপ কান্ট্রির সরকারদের আছে। আমরা কিন্তু আমাদের ডেমোক্রেসি হোক, আমাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সিস্টেমই হোক— ওই পর্যায়ে কিন্তু এখনো যায় নাই। বর্তমানে ওই পর্যায়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। যাতে সিটি করপোরেশনগুলো এবং নগরগুলোতে সেই রেসপনসিবল দিতে পারি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে নগরের বা সিটি করপোরেশনের অর্থনৈতিক সেই সক্ষমতা তারা অর্জন করতে পারতেছে না। অন্যান্য জায়গার সঙ্গে যদি আপনারা তুলনা করেন, তারা কিন্তু সেলফ সাফিসিয়েন্ট। তাদের আয় থেকে তারা এগুলো করতে পারে। এখন কিন্তু আমাদের কোনো সিটি, কোনো আরবান সেন্টার অর্থনৈতিকভাবে এই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি তারা এই সক্ষমতা অর্জন করতে পারলেই নগর সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আমাদের জন্য আরও সুবিধা।

প্রশ্ন ঃ সারা দেশে ৩২৯টি পৌরসভা আছে। অনেক জায়গায় রাজনৈতিক বিবেচনায় পৌরসভা হয়েছে। এসব পৌরসভা এখনো দুর্বল রয়েছে...।

মোশাররফ হোসেন : প্রথমত, রাজনৈতিক চাপে পৌরসভা করার কথা একেবারেই সঠিক নয়। পৌরসভা করতে গেলে একটা নির্দিষ্ট আইন আছে, ক্রাইট এরিয়া আছে। সেসব আট-দশটি ক্রাইট এরিয়া ফুলফিল না করলে পৌরসভা করা হয় না। আপনি যে রিমার্কটা করলেন এটা ঠিক না। হয়তো রাজনৈতিক কারণে কোনো একটা পৌরসভা যেটা দুই বছর পরে হওয়ার কথা ছিল সেটা দুই বছর আগে হয়ে গেছে। এইটা যে কোনো রাজনীতিবিদ দাবি করে করতে পারেন। এসব পৌরসভার কোনো ইনকাম নেই। আমরা সরকার থেকে তাদের ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কের জন্য সাবমেন্ট করি, এক্সট্রা বিবেচনায় কিছু অর্থ বেশি দেই। যেহেতু তারা নতুন পৌরসভা, তাদের স্ট্রাকচার ডেভেলপ করতে হবে, স্ট্রিট লাইটগুলো তৈরি করতে হবে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে হবে, ওয়াটার সাপ্লাইর উন্নয়ন করতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এসব বিবেচনায় তারা এক্সট্রা অ্যালোকেশন পায় এবং সক্ষমতা অর্জন করতে যেসব ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রয়োজন আছে এই মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয়।

প্রশ্ন : আপনার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। এখন এটি কবে নাগাদ নিকারে উঠতে পারে?

মোশাররফ হোসেন : নিকারে কবে উঠতেছে সেটা আমি বলতে পারছি না। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। উনি কবে অর্থনৈতিকভাবে বা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিবেন সেটা তাঁর বিষয়। তবে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে সেটা ঠিক। সচিব কমিটিও এটি পাস করে দিয়েছে। নিকারে পাস হলেই আমরা সিটি করপোরেশন পাব। আমার প্রচেষ্টা থাকবে নির্বাচনের আগে করতে পারলে আমার কয়েকটা ভোট বাড়বে।

প্রশ্ন : পদ্মা বিভাগের প্রক্রিয়া কতদূর?

মোশাররফ হোসেন : এটা পর্যায়ক্রমে হবে। ঢাকা ডিভিশনটা বিরাট ডিভিশন। এটাকে ভাগ করে তিন ভাগ করা হবে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় এবং জনগণেরও দাবি। সেই সুবাধে ময়মনসিংহ ডিভিশন অলরেডি হয়ে গেছে। ডিভিশন করতে হলে আরও আনুষঙ্গিক অনেক ইনফ্রাস্ট্রাকচার দরকার। আমার মনে হয়, ময়মনসিংহকে একটু অগ্রবর্তী পর্যায় নেওয়ার পরই ফরিদপুরের কার্যক্রমটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিবেচনায় আনবেন বলে আমার প্রত্যাশা।

প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দাবি জানিয়ে আসছে নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। তারা সংলাপের কথা বলছে, আলোচনার কথা বলছে...।

মোশাররফ হোসেন : দাবি তো সব সময়ই করে। আর একটা কথা খুব প্রচলিত আছে যে, কামান চাইলে বন্দুক পাব। এখন দাবি যদি কেউ করে, দাবির তো একটা বাস্তবতা দরকার। এখন উনারা যেসব দাবি করতেছেন সেটা সংবিধান পরিবর্তন না করে এ দাবি পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কাজেই সামনের নির্বাচনটা হবে সংবিধান অনুযায়ী এবং এই সংবিধানটা পার্লামেন্টে অনুমোদিত। কাজেই এখন সংবিধান পরিপন্থী কোনো দাবি এলে আমাদের সংবিধান পরিবর্তন করা ছাড়া সেই দাবি পূরণ করা সম্ভব না। আর সংবিধান তো পাস করেছে নির্বাচিত প্রতিনিধি। সেই জায়গায় উনারা যদি মনে করেন যে, উনারা ছিল না বলে সংবিধান পাস হয়নি, এটা তো তাদের বিবেচনা। পার্লামেন্টের মেজোরিটি ভোটে এই সংবিধান পাস হয়েছে। কাজেই এমন কোনো দাবি সরকার পূরণ করতে পারবে না।

প্রশ্ন : বিএনপি এক সময় সরকারে ছিল, বিরোধী দলেও ছিল। এখন তো তারা রাজপথের বিরোধী দল, বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা কি আপনাদের সরকারের আছে?

মোশাররফ হোসেন : আমি যদি পাল্টা প্রশ্ন করি যে, কোন বিধানে রাস্তাঘাটের একজন লোককে আপনি সরকারে নেবেন। সরকারে নিতে হলেও তো একটা বিধিবিধান সব দেশেই আছে। তাদের যদি পার্লামেন্টে রিপ্রেজেন্টেশন থাকত অবশ্যই তাদের নেওয়ার কথা আমাদের বিবেচনা করতে হতো, নিতেই যে হবে এমন কোনো কথা নয়। তাদের তো পার্লামেন্টে কোনো রিপ্রেজেন্টেশন নাই। তাদের দাবি যতই থাক যে তারা সর্ববৃহৎ দল কিন্তু আমরা তো সংবিধানে মিলাতে পারছি না।

প্রশ্ন : বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে ...। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ চায় না তারা নির্বাচনে আসুক। সেক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি না?

মোশাররফ হোসেন : প্রথম একটা কথা, আওয়ামী লীগ চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক— এ কথা কি সত্য? পারিপার্শ্বিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় মনে হয় আওয়ামী লীগ চাচ্ছে না তারা নির্বাচনে আসুক— এটা একেবারেই সারগর্ভহীন বক্তব্য এবং একটা উসকানিমূলক বক্তব্য এটা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে। আমরা তো চাই সবাই নির্বাচনে আসুক। এখন অবাস্তব দাবি করে যদি বলে যে দাবি পূরণ না হলে আমরা নির্বাচনে আসব না...। পৃথিবীর প্রত্যেকটা গণতান্ত্রিক দেশে ইন-গভর্নমেন্ট সরকারই নির্বাচন পরিচালনা করে। ইন্ডিয়ার মতো দেশেও ইন-গভর্নমেন্ট সরকার নির্বাচন পরিচালনা করে। এখন তারা যদি দাবি করেন যে এই সরকার রিজাইন করবে, কেবিনেট রিজাইন করবে, নতুন সরকার তাদের জন্য দিতে হবে। এই দাবিটা কী রকম— যে একটা সিলভার প্লেটে করে ক্ষমতাটা তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এটা কি সম্ভব হবে? তাদের সময় তো আমরা নির্বাচন করেছি। একটা পাবলিক মিটিং পর্যন্ত করতে পারিনি। একটা বিক্ষোভ করতে পারিনি। রাস্তায় আমরা বেরোতে পারিনি। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কনস্টেবল দিয়ে লাথি মেরেছে তারা। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ করতে গিয়ে গ্রেনেড হামলা করে ২২ জন মানুষ মেরে ফেলল। তারপরও যদি বলেন আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি। তাহলে কী তাদের হাতে সিলভার প্লেট তুলে দেওয়া ছাড়া তো আর কোনো পথ নেই।

সর্বশেষ খবর