বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজনীতিতে অক্টোবর উত্তেজনা

আগেই পাল্টাপাল্টি, ১০ তারিখে রায়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, ভোটের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি, নানা প্রস্তুতি সরকারি দলেরও

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

রাজনীতিতে উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে। আগামী শনিবার কেন্দ্রীয় ১৪ দল ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা পাল্টা কোনো কর্মসূচি পালন করবেন না। তবু থামেনি অক্টোবর উত্তেজনা। ১০ অক্টোবর হবে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়। এদিন বিএনপির অনেকের বিরুদ্ধে রায় হতে পারে। এ নিয়ে বিএনপিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রায় ঘিরে কঠোর কর্মসূচির প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। একইসঙ্গে সহিংসতা করলে রাজপথেই প্রতিহত করার ঘোষণা আছে সরকারি দলের। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গঠন হবে নির্বাচনকালীন সরকার। বিএনপি বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠনের দাবি করে আসছে। সরকার বলছে, যা কিছু হবে সংবিধানের ভিতর থেকেই। ফলে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে টানটান উত্তেজনা। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তারা সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘিরে এখন থেকেই সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপত্তায় কোনোরকম ঝুঁকি নেবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী শনিবার থেকে সরকারকে ১২ দফা লক্ষ্য ও ৭ দফা দাবিতে আলটিমেটাম দিয়ে রাজপথে নামবে বিএনপি। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১ অক্টোবর থেকেই রাজপথের গরম কর্মসূচি দেবে দলটি। গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে যৌথসভা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারাও। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটও আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে। অক্টোবরজুড়েই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১ অক্টোবর থেকে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তিনি মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এবার সরকারকে খালি মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আমরা আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণ করে এ সরকারকে অপসারিত করব। তা করব শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের মাধ্যমে। কোনো ভায়োলেন্সের মাধ্যমে নয়।’ জানা যায়, শনিবার রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। কার্যত ওই শোডাউনের মাধ্যমেই রাজপথে আন্দোলনে নামবে দলটি। এর আগে সরকারকে আলটিমেটামও দেবে। ঢাকা মহানগরী বিএনপি, অঙ্গসংগঠন ও আশপাশ জেলার নেতা-কর্মীদের ওই অনুষ্ঠানে থাকতে বলা হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি। এ নিয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম গতকাল ডিএমপিতে যান। পুলিশ কমিশনার দেশের বাইরে থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বিএনপিকে জানান, তারা চাইলে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করতে পারেন। শেষমেশ না পেলে সেখানেই বড় ধরনের শোডাউন করবে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছেন, আগামী শনিবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি করবে না ক্ষমতাসীন দলটি। কেন্দ্রীয় ১৪ দল কর্মসূচি ঘোষণা করার দুই দিন পর বিএনপি কর্মসূচি দেওয়ায় এটা তাদের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেখছেন। তবে ওইদিন কর্মসূচি না করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেবে না। পাল্টা কর্মসূচি দেয় তারা, যারা ভয় পায়। আমরা ভয় পাই না।’ দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অবশ্য বলেন, ‘কিন্তু আপনারা রাজপথে থাকবেন। কাউকে রাজপথ দখল করে সভাসমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। আপনারা আগে কাউকে আক্রমণ করবেন না। কেউ যদি আপনাদের আক্রমণ করে, তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’ এদিকে ১ অক্টোবর থেকে বিএনপি রাজপথে নামার ঘোষণা দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সতর্ক রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, বিগত সময়ে বিএনপি রাজপথে নেমেই মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের কোনোভাবেই মাঠ দখলে নিতে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রমতে, ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা হবে। ওইদিন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাজা হতে পারে। বিগত সময়ে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এবার নাশকতা করতে পারেন— এমনটিই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সেজন্য রায় ঘিরে দলটির নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওইদিন সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছাড়াও মোড়ে মোড়ে শক্ত অবস্থান নেবেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। যেখানেই সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও সেখানেই প্রতিহত করা হবে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় সতর্ক থাকবেন তারা। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি ও দলের নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কাউকে নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। যেখানেই নৈরাজ্য, সন্ত্রাস সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের রাজপথে প্রতিহত করব।’ সূত্র জানান, ১ অক্টোবর থেকে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচিতে যাবে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া। তারা দেশব্যাপী জনসভাসহ গণসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা শুধু সভা-সমাবেশেই থাকবেন না। এ ক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তা ছাড়া ১০ অক্টোবর নিয়েও উদ্বিগ্ন বিএনপি। সে ক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা হলেও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলেও দাবিগুলো তুলে ধরেছে। যুগপত্ভাবেও কর্মসূচিতে যাবে দলটি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বড় ধরনের কর্মসূচির বিকল্প নেই। বিএনপি এককভাবে সে ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এখন শুধু সভা-সমাবেশই নয়, অলআউট কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি।

সর্বশেষ খবর