বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরকার উসকে দিতে চায় : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘাত উসকে দিতে চায় সরকার। তারা এখন পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়।’ আপনারা শনিবারের সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করবেন কিনা—এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভাই, অনুমতির আবেদন-টাবেদন আর নয়। ইট ইজ দেয়ার রেসপনসিবিলিটি। এটা তারা ঠিক করবেন কী করবেন? আজকে আমরা যৌথ সভা করেছি আগামী ২৯ তারিখের জনসভার জন্য। আগামী শনিবার ঢাকায় বিএনপি সমাবেশ করবে এবং এতে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও কর্মসূচির কথা জানানো হবে ইনশা আল্লাহ।’ গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এ অভিযোগ করেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দলের ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতা এবং সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দলের যুগ্ম-মহাসচিববৃন্দসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও এতে অংশ নেন। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপি প্রথম বৃহস্পতিবার সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে পরে তা পরিবর্তন করে শনিবার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বন্ধের দিন সমাবেশ হলে সুবিধা হয়, এ কথা বলে সমাবেশের দিন পরিবর্তনের জন্য বলেছিল পুলিশ। সে অনুযায়ী আমাদের এই সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন। কিন্তু এর পরও সরকারি দলের নেতারা ওই দিন মাঠে থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পুলিশই বলল নয়াপল্টনে সমাবেশ না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে। এখন পুলিশ বলছে, ওই দিন আরেকটি কর্মসূচি আছে। পুলিশ বিরোধের আশঙ্কার কথা বলছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না ওই প্রোগ্রামের সঙ্গে আমাদের জনসভার কী সম্পর্ক? বিরোধটা কোথায়, বুঝতে পারছি না।’ বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতা নাসিম সাহেব বলেছেন, অলিতে-গলিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটকে দিতে। আর নানক সাহেব বলেছেন হাত-পা ভেঙে দিতে। এই হচ্ছে তাদের গণতন্ত্রের ভাষা। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, কারা শুরুতে সংঘাত সৃষ্টি করে। কারা সংঘাত উসকে দিতে চায়।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের একটি মতবিনিময় সভা আছে। সেটি হবে মহানগর নাট্যমঞ্চে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সেটি অনেক দূরে অবস্থিত। এখানে বিরোধের কী আছে?’ বিএনপির জনসভা ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারা সন্ত্রাস করে তা আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য দেখে বোঝা যায়। বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, নেতাদের বক্তব্যই সেটা পরিষ্কার করেছে। এই তো হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের ভাষা। জনগণ বিবেচনা করবে এই সংঘাত-সহিংসতা কারা শুরু করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর কারা লগি-বৈঠা দিয়ে ২৭ জন তরুণকে হত্যা করেছিল এটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটা যে, আমাদের মিডিয়া কেন জানি এসবকে সামনে তুলে নিয়ে আসে না। দেশে এখনো সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে আওয়ামী লীগ।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুধু নাম উল্লেখ করেই মামলা হয়েছে সোয়া তিন লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্বাচন সামনে রেখেই মূলত এসব মামলা হচ্ছে। অথচ সরকারপ্রধান দেশে, এমনকি বিদেশে গিয়েও বলেছেন, তিনি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার চক্রান্ত আর এসব গায়েবি মামলা হচ্ছে সেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নমুনা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট হামলার মামলার রায় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ রায়কে কেন্দ্র করে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন রকম কথাবার্তা আসছে। এ মামলা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে এখানে জড়ানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সাজা দেওয়ার হীন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের চক্রান্ত দেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না।’

রাজধানীতে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওচিত্রের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গাড়িতে থাকা এক নারী রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে হুমকি দিয়ে কথা বলছেন। সরকারি দলের এমপির মেয়ে হিসেবে পুলিশকে ধমকাচ্ছেন। এটাই তো দেশের বর্তমান চিত্র। সরকারপ্রধানও দেশের বাইরে ভালো ভালো কথা বলেন। কিন্তু দেশে এসে ‘‘হুমকি-ধমকি’’ শুরু করেন।’ বিএনপি নাকি বেগম খালেদা জিয়ার ভ্যানিটি ব্যাগে। আর আন্দোলন নাকি কারাগারে!—আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আন্দোলন তো কারাগারেই। গোটা বাংলাদেশকেই তো আপনারা কারাগারে পরিণত করেছেন। জনগণ আন্দোলন করে এই কারাগার ভাঙবে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে ইনশা আল্লাহ।’ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের হুমকি-ধমকির পর আগামী শনিবারের সমাবেশটি বিএনপি করবে কিনা—জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে জানানো হবে। তবে দলের নীতিনির্ধারণ নিয়ে কথা বলা ও দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যেই এ সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।’

সমাবেশে জাতীয় ঐক্য এবং যুক্তফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা—এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সময় হলেই জানতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘আজকের (বুধবার) যৌথ সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানেরও দাবি জানানো হয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর