বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল আইন ঝুঁকিপূর্ণ

—ড. ইফতেখারুজ্জামান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ডিজিটাল আইন ঝুঁকিপূর্ণ

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’-এ সম্মতি প্রদান না করে আইনটির বিতর্কিত ধারা পুনর্বিবেচনার জন্য জাতীয় সংসদে ফেরত পাঠাতে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস-২০১৮ উপলক্ষে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ আবেদন জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এটিকে ‘কালো আইন’ বলে অভিহিত করে টিআইবি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্তর্নিহিত উপাদান ও সংবিধানবিধৃত মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই আইন পাস। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য অধিকার আইন একটি ব্যতিক্রমধর্মী আইন যা সরকার, জনপ্রতিনিধি ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহির মধ্যে আনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে ক্ষমতা প্রদান করেছে এবং এ জবাবদিহি নিশ্চিতের পূর্বশর্ত হলো চাহিদা অনুযায়ী যথানিয়মে তথ্য প্রদান। আইনটির প্রয়োগে সরকারের উদ্যোগ— যেমন তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত তথ্য জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং এর সঙ্গে তথ্য অধিকার আইনকে সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টা, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রকাশকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান প্রভৃতি ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক। তবে একইসঙ্গে সরকারের নেতিবাচক ও হতাশাব্যঞ্জক উদ্যোগও লক্ষণীয়। তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশকিছু আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষুণ্ন হয়ে আসছে। আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারার রূপান্তর হিসেবে সম্প্রতি সংসদে অনুমোদিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঔপনিবেশিক সময়ের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত পশ্চাদমুখী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আইনের ফলে সাংবাদিক বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য বড় ধরনের হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হবে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল যে সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ ধরনের আইন প্রণয়ন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ড. জামান বলেন, আইনটি দেশে গণতন্ত্র বিকাশের পথে বিরাট প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে সব নাগরিকের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টি করবে। এ মানববন্ধনে টিআইবি কর্মীবৃন্দ ছাড়াও টিআইবির অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়েস গ্রুপের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া গতকাল টিআইবি ও তথ্য কমিশনের যৌথ উদ্যোগে টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে বাংলাদেশ স্কাউটস, বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৫২ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে তথ্য অধিকার আইনবিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ, তথ্য কমিশনার নেপালচন্দ্র সরকার ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর