বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা

খালেদা জিয়ার রায় ২৯ অক্টোবর

যুক্তিতর্ক ছাড়া তারিখ নজিরবিহীন : খালেদার আইনজীবী। সব আইনিভাবেই হয়েছে : দুদকের আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়ার রায় ২৯ অক্টোবর

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে। গতকাল এ মামলার রায়ের জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে।

এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে এ আদালত। ওই দিন থেকেই বন্দীজীবন যাপন করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এদিকে চ্যারিটেবল মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। অন্যদিকে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার চালানো এবং যুক্তিতর্ক ছাড়া রায়ের দিন নির্ধারণকে বেআইনি উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন।

এর আগে রবিবার খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কয়েকটি ধার্য তারিখে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করায় বিচারের এ অংশটি বাদ দিয়েই রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য আদালতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারক গতকাল তার আদেশে বলেন, ‘আসামিপক্ষ নানা কারণ দেখিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেননি, কালক্ষেপণ করেছেন। সেজন্য প্রসিকিউশন যে আবেদন করেছে সে আবেদন মঞ্জুর করা হলো। আগামী ২৯ অক্টোবর এ মামলা রায়ের জন্য থাকবে। খালেদা জিয়া সেদিন পর্যন্ত জামিনে থাকবেন।’ এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিপক্ষকে সে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বলে আদেশে উল্লেখ করেন বিচারক। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেআইনিভাবে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ নজিরবিহীন। আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাব।’ তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কখনো আমরা দেখিনি যুক্তিতর্ক ছাড়া রায় হয়েছে। এ সিদ্ধান্তটা আইনি ভিত্তিতে নয়, গায়ের জোরে দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের প্রতি আদালতের এমন আচরণে বোঝাই যাচ্ছে একটি ফরমায়েশি রায় হবে।’ আদেশের পর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া দিনের পর দিন ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে হাজির হননি। তার সুবিধার কথা বিবেচনা করে আদালত পর্যন্ত স্থানান্তর করা হলো। এর পরও তিনি আদালতে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাই আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণার আবেদন করেছিলাম। আইনের ওপর ভিত্তি করেই আদালত রায়ের জন্য দিন ঠিক করেছে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।’ ২০১০ সালের ৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেন। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে আসা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন খালেদা জিয়া। সেখানে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে তিনি আদালতের কাছে সুবিচার চান। তার আবেদনে কয়েক দফা এ মামলার বিচারক বদলে দেয় হাই কোর্ট। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নানাভাবে সময় ক্ষেপণ করে বিচার বিলম্বিত করেন বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীও এ মামলার আসামি। পলাতক হারিছ চৌধুরীকে ২১ আগস্ট মামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর