রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিদ্রোহী হলেই বহিষ্কার

রফিকুল ইসলাম রনি

বিদ্রোহী হলেই বহিষ্কার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। কেউ দলের নির্দেশ অমান্য করলে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও দলীয় অবস্থান থেকে বঞ্চিত করা হবে। এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের বিপরীতে গড়ে ১৩ জন দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এক আসনে সর্বোচ্চ ৫২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। দলের প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা না হলেও ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কমবেশি জেনে গেছেন কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন বা কারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে গণভবনে নেতার ভিড় লেগেই আছে। দলীয় সভানেত্রীও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতাদের কথা শুনছেন। এসব নেতার অনেকেই সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নীতিনির্ধারকদের ধারণা, মনোনয়নবঞ্চিতরা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে থাকবেন কিংবা তলে তলে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন যা দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবির কারণ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। তিনি যত বড় প্রভাবশালী হোন না কেন, কোনো ধরনের দয়া দেখানোর সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘দল করতে হলে সিদ্ধান্ত মানতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব সিরিয়াস।’

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে খুব বেশি পরিবর্তন করা হচ্ছে না। বর্তমানে যারা এমপি রয়েছেন, তার অধিকাংশই এবারও নৌকা নিয়ে লড়বেন। এ ছাড়া মহাজোটের আসনে যারা এমপি ছিলেন তার অধিকাংশকেও এবার মহাজোটের প্রার্থী করা হচ্ছে। তবে কিছু কিছু আসনে মহাজোটের প্রার্থীদের ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তারা দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। দলটির নেতারা ধারণা করছেন, জোটের আসনে কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। তবে যারাই বিদ্রোহী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলকে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, আমাদের জোটের ঐক্য ঠিক রাখতে হবে। সে কারণে দল ও জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। দল ও মহাজোট ক্ষমতায় এলে সবাইকে মূল্যায়ন করা হবে। এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত। এর বাইরে গিয়ে কেউ বিদ্রোহী হলে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার নজির নেই। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব চলে আসে। প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার মিল না হলে সরকারবিরোধী হওয়ার জোর সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া এবার বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন দলের সকল পর্যায়ের নেতার ঐক্য। নির্বাচনে সবাইকে প্রার্থীর পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তা না হলে ভোটের মাঠে মাশুল দিতে হবে। তাই কেউ যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না হন বা দল বা জোটের প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ না করেন, এটি এখন থেকেই নিশ্চিত করতে চান দলের হাইকমান্ড। গত ১৪ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৪ হাজার ২৩ জন নেতা। সে সময় দীর্ঘ সোয়া ঘণ্টার আবেগঘন বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বাসঘাতকদের দলে ঠাঁই হবে না। আওয়ামী লীগ চায় দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে। আর দেশকে এগিয়ে নিতে বিশ্বাসঘাতকদের প্রয়োজন নেই। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া যাবে না। দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। তিনি বলেন, যাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে, বৃহত্তর স্বার্থে তাকে বিজয়ী করতে সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে হলে অবশ্যই প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী রাখতে হবে। দলের নেতা-কর্মীদের মনে রাখতে হবে, ঐক্যের বিকল্প নেই। একটি আসনে পরাজয় মানেই কিন্তু পিছিয়ে পড়া। কাজেই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া কিংবা প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর