রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আড়াই দিনেই টেস্ট জয়

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

আড়াই দিনেই টেস্ট জয়

লাল বলটা দুপুরের কড়া রোদে আকাশে উড়াল দিতেই দর্শকসারিতে শোর উঠল। ক্যাচটা হয়ে গেলেই শেষ হার্ডলটা পেরিয়ে আড়াই দিনের রেসে জয়ের উল্লাস করতে পারে বাংলাদেশ। মিরাজের ছুড়ে দেওয়া বলটা আকাশে উড়িয়েছেন ওয়ারিকান (৪১)। ফিল্ডার সাকিব আল হাসান। কিছুদিন আগেও যার ব্যান্ডেজ বাঁধা আঙ্গুলগুলো কোটি কোটি সমর্থককে অজানা শঙ্কার সাগরে ভাসিয়েছিল। সাকিব কী পারবেন! নবম উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়ের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিলেন ওয়ারিকান ও অ্যামব্রিস (৪৩)। সাকিব বেশ উঁচু থেকে পড়া বলটা দুবারের চেষ্টায় তালুবন্দি করলেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস গ্যালারিতে। ১১১ নম্বর টেস্টে ধরা দিল ১২ নম্বর জয়। স্বস্তি পেয়েছিলেন সাকিবও। যাক, ফিটনেসটা ঠিকই আছে। উইকেট শিকারের চেয়েও তিনি এই ক্যাচটাকে বেশি গুরুত্ব দিলেন। কেনই বা দিবেন না! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাকিবের নেতৃত্বেই সর্বশেষ জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ক্যারিবীয়ানদের হারিয়েছিল তাদেরই মাটিতে। এরপর গত বছর পেরিয়ে গেছে! মধ্যখানে কেবল একটা টেস্ট ড্র করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টাইগাররা। তাও এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই। ২০১১ সালের পর তো কেবল পরাজয়টাই সঙ্গী ছিল। গতকাল আড়াইদিনের ম্যাচটা ৬৪ রানে জিতে অতীতের সব দুঃখ মোচন করে নিল টাইগাররা। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২০৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ক্যারিবীয়দের ইনিংস শেষ হয় ১৩৯ রানে। বাংলাদেশ তৃতীয় ইনিংসে ১২৫ রানে অলআউট হয়েছিল। খানা খন্দকে ভরা এক উইকেট। যার প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ছড়ানো অসংখ্য ফাঁদ। সাগরিকার উইকেটটা ব্যাটসম্যানদের কাছে হয়ে উঠেছিল অচেনা সমুদ্র সৈকতের মতোই! যেখানে অজস্র অজানা চোরাবালি জালের মতোই বিছিয়ে রাখা! অসাবধান হলেই আটকে পরে জীবনপাতের ভয়! বাংলাদেশ এই ভয় জয় করলেও ফাঁদে পা দিয়ে তড়পাতে তড়পাতে জীবন দিয়েছে ক্যারিবীয়রা। কেউ কেউ তো ফাঁদে পড়ার বিষয়টা বুঝে উঠার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে! বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা সাইক্লোন যেন সাকিব-নাঈম-তাইজুল-মেহেদিরা। ক্যারিবীয়ান ঝড় যেন ওয়ারিকান-বিশু-চেইসরা। মধ্য সমুদ্রের ঘূর্ণিপাকে আক্রান্ত হয়ে যেভাবে একের পর এক জাহাজ ধ্বংস হয়ে যায় তেমনি সাগরিকার উইকেটে দুই দেশের স্পিনারদের প্রবল ঘূর্ণির মুখে একের পর এক আত্মাহুতি দিলেন ব্যাটসম্যানরা। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল ম্যাচসেরা মুমিনুল (১২০)। দুই দলের চার ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি কেবল দুটি (হেটমেয়ার ৬৩, ডওরিচ ৬৩)। আর স্পিনাররা চার ইনিংসের ৪০ উইকেট থেকে শিকার করলেন ৩৪টা। এর মধ্যে নাঈমের ৫ (প্রথম ইনিংস) এবং তাইজুলের ৬ (দ্বিতীয় ইনিংস) উইকেট শিকারের ঘটনা তো আছেই। মুমিনুল প্রথমদিনেই বলেছিলেন, টেল এন্ডারদের ব্যাটিংটাই (প্রথম ইনিংসে তাইজুল-নাঈমের ৬৫ রানের জুটি) আমাদের জিতিয়ে দিতে পারে। তার কথাটাই সত্যি হলো। বিষয়টা গতকাল স্বীকার করে গেলেন দুই দলের অধিনায়কই। চট্টগ্রাম টেস্টটা তাই টেল এন্ডারদের লড়াই হয়ে থাকল। ক্যারিবীয়রাও তো নবম উইকেটের জুটিতে (৬৩) গতকাল বাংলাদেশের ঘাম ঝরিয়েছিল! রানের হিসেবে এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জয়ের একটা। কিন্তু দিনের হিসেবে এই জয়টা সবার উপরেই থাকবে। সাতটা ইনটেক্ট সেশন হাতে রেখেই জিতেছে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দীর্ঘদিন জয় না পাওয়ার দুঃখটা বেশ ভালোভাবেই এবার ভুলল টাইগাররা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর