শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
এবার প্রস্তুতি ভোটযুদ্ধের

শেখ হাসিনার ইমেজ ও উন্নয়ন প্রচারণায় আওয়ামী লীগ

টুঙ্গিপাড়া থেকে প্রচারে নামছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী

রফিকুল ইসলাম রনি

শেখ হাসিনার ইমেজ ও উন্নয়ন প্রচারণায় আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনার বিশাল ইমেজ আর বর্তমান সরকারের টানা ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সামনে রেখে ভোট প্রচারণায় নামছে আওয়ামী লীগ। ভোটের কৌশল ও সার্বিক প্রচারণার পরিকল্পনাও তৈরি করা আছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হলেই আওয়ামী লীগ মানুষের মাঝে তাদের কর্মসূচি নিয়ে যাবে। অতীতের মতো তারুণ্যের জন্যও থাকবে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ শেষ পর্যায়ে। দলের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে সভানেত্রীর অফিস ব্যস্ত নির্বাচনী কার্যক্রম নিয়ে। দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সূত্রমতে, সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সব কৌশল শেষ পর্যায়ে। এবার আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাদের দেশব্যাপী নির্বাচনী কাজে লাগানো হচ্ছে। মূলত তারা সার্বিক বিষয় মনিটরিং করবেন। এজন্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি গাইডলাইন দিয়েছেন। তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ১৫টি নির্বাচনী উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবরা। এ বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে নির্বাচনী সব কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা। গতকাল রাতেও ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর অফিসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বৈঠকে করেন দলের সিনিয়র নেতারা। এ সময় দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে আজ (গতকাল) বৈঠকে বসেছিলাম। দলের সাধারণ সম্পাদক বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আগামীকাল (আজ) দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে ১৫টি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেখানে নির্বাচনী সব কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেভাবেই কাজ করছি।’ দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রচারণায় জোর দেওয়া হচ্ছে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর বিশাল ইমেজ। তার কর্মদক্ষতায় গত ১০ বছরে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। সেগুলো তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া বর্তমানে যেসব উন্নয়ন হয়েছে এবং আগামীতে ক্ষমতায় এলে কী কী করা হবে সেগুলোও তুলে ধরা হবে। সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে— বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮৬ শতাংশে উন্নীতকরণ, ভারত ও মিনায়নমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায়ে সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই বিতরণ, কৃষকের জন্য কৃষি কার্ড ও ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিনা জামানতে বর্গা চাষিদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসার জন্য সারা দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২১ শতাংশে কমিয়ে আনা, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীতকরণ ইত্যাদি। নিজস্ব স্যাটেলাইট উেক্ষপণ, ঢাকায় মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। সব সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই। ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কোন অবস্থায় দেখতে চান— সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেলটা প্ল্যান তৈরি করেছেন। জানা গেছে, এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডেলটা প্ল্যান তুলে ধরা হচ্ছে। ‘গ্রাম হবে শহর’ এ স্লোগানে ইশতেহারে থাকছে ভোটার টানার চমক। ইতিমধ্যে ইশতেহারের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সংযোজন ও বিয়োজন। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কাজের সঙ্গে যুক্ত দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় গত ১০ বছরে কোন কোন খাতে কী পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, সে চিত্র তুলে ধরা হবে।’ দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, ১১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক ছাত্রনেতা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্মানীয় ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট প্রচারে নামবে আওয়ামী লীগ। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। ১৫টি টিমে ভাগ করে তারা জেলায় জেলায় নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেবেন। এসব কমিটিতে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের আহ্বায়ক করা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন করছেন, তারা পাশের আসনগুলোয় নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় দলের হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন তারকাদেও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার-প্রকাশনা উপকমিটির নেতারা। জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক ভোট প্রচারণা শুরু হলেই বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করা হবে তাদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তারা থাকবেন প্রচারণায়। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এবার সেলিব্রেটিরা যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে থাকবেন জাহিদ হাসান, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, অরুণা বিশ্বাস, সাদিয়া ইসলাম মৌ ও শমী কায়সার। এ ছাড়া আর নতুন তারকা যুক্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’ দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসনের দলীয় প্রার্থী বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জাও থাকবেন নির্বাচনী প্রচারণায়। তিনি নিজ আসন ছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা করবেন বলে জানা গেছে।

টুঙ্গিপাড়া থেকে প্রচারণায় নামছেন শেখ হাসিনা : টুঙ্গিপাড়া থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় নামছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। ওইদিন টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন শেখ হাসিনা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় নির্বাচনী সফর হবে সিলেটে। ওইদিন সিলেটে জনসভায় অংশ নেওয়া ছাড়াও হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন তিনি। এরপর উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা এবং কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সফর সূচি চূড়ান্ত করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গণভবনে ডেকে এমন নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, দলের মনোনয়নবঞ্চিত কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে ডেকে নেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক পাওয়াদের মধ্যে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন। এ সময় গণভবনে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, আ খ ম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভোটের মাঠে সাংগঠনিক লোক দরকার হয়। তা না হলে ভোটের ফলাফল পাওয়া যায় না। কাজেই তোমাদের সবাইকে দলকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আনতে কাজ করতে হবে। এখন থেকে তোমরা নিয়মিত ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে সারা দেশে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে সেগুলো সমাধান করবে। একই সঙ্গে প্রথমে টুঙ্গিপাড়া, পরবর্তীতে সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী সফরের তারিখ চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দেন তিনি।

 

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল। সবার মধ্য থেকে যিনি যোগ্য আমি তাকেই প্রার্থী করেছি। সবাইকে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ স্বাধীনতাবিরোধীরা, দলছুট নেতারা এক হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কাজেই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা সফল হতে পারবে না।

সূত্র জানায়, দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির কার্যালয়ে বসে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে এমপি প্রার্থী এবং জেলা-উপজেলা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। নেতারা জানিয়েছেন, আজ বিকাল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করবেন।

সর্বশেষ খবর