শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
এবার প্রস্তুতি ভোটযুদ্ধের

খালেদার মুক্তির বার্তা নিয়েই মাঠে থাকবে বিএনপি

ভোট পাহারায় কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি

মাহমুদ আজহার

খালেদার মুক্তির বার্তা নিয়েই মাঠে থাকবে বিএনপি

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ‘বার্তা’ নিয়েই ভোটের মাঠে থাকবেন বিএনপি প্রার্থীরা। এবারের ভোটকে তারা নিচ্ছেন আন্দোলনের কৌশল হিসেবে। এ নিয়ে বিএনপির একটি শক্তিশালী টিমও কাজ করছে। ইশতেহারে তারুণ্যের জন্য পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে দলটি। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর বিএনপি তাদের এজেন্ডা জনগণের সামনে তুলে ধরবে। দলীয় নেতারা জানান, শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতেও এবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ ব্যাপারে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘ভোটের অধিকার ও বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি আন্দোলনই আমাদের ভোটে যাওয়ার লক্ষ্য। এজন্য ভোটের শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। এবার আর ফাঁকা মাঠে কাউকে গোল করতে দেওয়া হবে না। জনগণের ভোটে বিএনপি বিজয়ী হলে গণতন্ত্রও মুক্তি পাবে।’ দলীয় সূত্রে জানা যায়, ভোটের সামগ্রিক বিষয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পর্যবেক্ষণ করছেন। কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো নির্দেশনা থাকলে তাও কার্যকর করা হচ্ছে। ভোটের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছেন তারেক রহমান। এ ছাড়া তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কোথাও কারও কোনো সমস্যা হলে তা উত্তরণে লন্ডন থেকেই দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র-জুনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তিনিও স্কাইপিতে যোগ দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে। তিনি ভোট করতে পারবেন কিনা এখনো অনিশ্চিত। তাকে জেলে রেখে আমাদের ভোটে যাওয়া কত যে কঠিন তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তার পরও চরম বাস্তবতা সামনে রেখেই আমরা ভোটে যাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বেগম খালেদা জিয়ার ও গণতন্ত্রের মুক্তি এবং জনগণের ভোটাধিকার জনগণের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া।’ দলীয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যখন বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডে সাক্ষাৎকার দিতে আসেন তখন দলের হাইকমান্ড প্রার্থীদের কাছে জানতে চান, ‘আমরা ভোটে যাচ্ছি কেন? সুষ্ঠু ভোটেরও তো সম্ভাবনা কম।’ এ সময় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভিন্ন ধরনের উত্তর দেন। তখন বিএনপির হাইকমান্ড থেকে প্রার্থীদের জানানো হয়, ‘আমরা ভোটে যাচ্ছি গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য। জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।’ তখন সবাই একবাক্যে হাইকমান্ডের এ বক্তব্য স্বীকার করে নেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে তারা ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত অবস্থান করবেন। কেন্দ্রের সব সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। ওই সময় প্রার্থীরা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আরও প্রতিশ্রুতি দেন, দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাই কাজ করবেন। বিএনপি নেতারা জানান, সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন প্রতীক পাওয়ার অপেক্ষায়। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হলে ধানের শীষের প্রার্থীরা আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবেন। এরই মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বার্তাসংবলিত লিফলেট তৈরি করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় বিতরণ শুরু করেছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হলে প্রতিটি ঘরে এ লিফলেট পৌঁছে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে বিগত ১০ বছরে সরকারের নানা অনিয়মের চিত্রও তুলে ধরা হচ্ছে লিফলেটে। প্রার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজও খুলেছেন। ইউটিউবে নিজের বক্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। গতানুগতিক প্রচারণার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত প্রচারণাও চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সবাই এখন ভোটের মাঠে। কিন্তু গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। আমরা ভোটারদের মাঝে এ বিষয়টিও তুলে ধরার চেষ্টা করছি, গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্তির স্বার্থে ধানের শীষে ভোট দিন। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তাকে কারাগারে রাখার বিষয়টি সর্বসাধারণও ভালোভাবে মেনে নিতে পারছে না। তাই সবাই এখন ধানের শীষে ভোট দিয়ে জবাব দিতে প্রস্তুত।’

প্রার্থী বাছাইয়ের পর জোট-ফ্রন্টের আসন বণ্টন : ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আসন বণ্টন নিয়ে বসবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী তালিকা করে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর কাছে চিঠি দেওয়া হবে। আরেকটি অনুলিপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে নির্বাচন কমিশনে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের আসন বণ্টনও চূড়ান্ত হবে বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর। গতকাল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর