বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন

শেখ হাসিনা গতকাল ইশতেহার ঘোষণা করেন

বিগত ১০ বছরে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের ও দলের নেতাদের ভুলত্রুটি ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে’ দেখার অনুরোধ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানুষমাত্রই ভুল হয়। আমি নিজে এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব। আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে দেব— এটা আমাদের জাতির কাছে ওয়াদা।’ গতকাল সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রথমেই আওয়ামী লীগের শাসনমালের উন্নয়ন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য ছাড়াও কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ৮০ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইশতেহারের সারসংক্ষেপ পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি। আমাদের এবারের অঙ্গীকার— আমরা টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করব। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণ কিছু পায়। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও সমৃদ্ধির সব সুযোগ এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যা কিছু মহৎ অর্জন ও প্রাপ্তি, সবকিছু অর্জিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার উত্খাত এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আমরা আলোর পথে যাত্রা করেছি। একাদশ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা আবারও ‘‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” স্লোগানসংবলিত নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে হাজির হয়েছি। আমরা ইশতেহার এমনভাবে তৈরি করেছি, যাতে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। একইসঙ্গে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারেও সংরক্ষিত রয়েছে।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়-পরিজনকে হারিয়ে আমি রাজনীতি করছি শুধু জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। এ দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য। এ দেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন পায়, তাদের জীবনটাকে আরও উন্নত করা— এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা সাড়ম্বরে পালন করব। বাঙালি জাতির এ দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে, সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে।’ ইশতেহার ঘোষণার শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ আর্থিক দিক থেকে যেমন শক্তিশালী, তেমন মানসিকতার দিক থেকে অনেক বলীয়ান। ছোটখাটো অভিঘাত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আর থামিয়ে রাখতে পারবে না। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে। আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে যেখানে ৫৪৩ মার্কিন ডলার ছিল, সেখানে ১৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ওপর। দারিদ্র্যের হার যেখানে ২০০৬ সালে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, সেখানে আজকে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ।’ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে নিজ সরকারের উন্নয়নের তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের জিডিপির আকার প্রায় পাঁচ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি থেকে প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে ৩১তম। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ প্রায় ৭ দশমিক ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকায়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যা কিছু মহৎ অর্জন ও প্রাপ্তি, সবকিছু অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আগে তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর পেয়েছিলেন রাষ্ট্র পরিচালনা করার। শূন্য কোষাগার, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা, বন্ধ কলকারখানা নিয়ে জাতির পিতা পথচলা শুরু করেছিলেন। ১ কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা ছিল এক দুরূহ কাজ। তার ওপর শুরু হয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশি ও বিদেশি চক্রান্ত। এসব প্রতিবন্ধকতা, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ থেকে ১৯৯৯ সাল— এ সময় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ মানেই ছিল বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, কঙ্কালসার মানুষের দেশ।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল— এ পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ। আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করি। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ ও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি।’ ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ২০০১-পরবর্তী পাঁচ বছর ছিল আওয়ামী লীগ ও এ দেশের সাধারণ মানুষের এক বিভীষিকাময় সময়। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার, খুলনার অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, নাটোরের মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। হাওয়া ভবন তৈরি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচার করা হয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাই, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ নানা ধরনের জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়। রমনা বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও পল্টনে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বোমা হামলা করে হত্যাচেষ্টা এবং ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা, একই বছর গাজীপুরে বোমা মেরে ১০ জনকে হত্যা, শরীয়তপুরে দুই বিচারকসহ সারা দেশে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এসব জঙ্গিগোষ্ঠী।’ গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগের র?্যালিতে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে রক্ষা পেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন এবং ৫০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়। আহতদের অনেকেই এখনো অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় দিনযাপন করে যাচ্ছেন।’

আওয়ামী লীগের ইশতেহারের সংক্ষিপ্তরূপ:  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, গ্রামকে আধুনিকায়ন করে শহরের সুবিধা প্রদান, শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৮০ পৃষ্ঠার ইশতেহারে।

ইশতেহারে উল্লিখিত ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার —১. আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, ২. তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, ৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, ৪. নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা ও শিশুকল্যাণ, ৫. পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; ৬. সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল, ৭. মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, ৮. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, ৯. দারিদ্র্য নির্মূল, ১০. সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, ১১. সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ১২. সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, ১৩, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, ১৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ১৫. আধুনিক কৃষিব্যবস্থা-লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ, ১৬. দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, ১৭. জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ১৮. ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন, ১৯. নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, ২০. প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ এবং ২১. টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমার গ্রাম-আমার শহর : গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আয়ুর্বেদি, ইউনানি, দেশজ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা এবং শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখা হবে। উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সব সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাংক জালিয়াতির হোতাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতা গেলে দেশের ব্যাংক খাতের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর এবং শক্তিশালী করা হবে। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না : ক্ষমতায় এলে আগামীতেও কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এ নীতি সমুন্নত রাখা হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশের সমাজ গড়ে তোলা হবে। গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ : বিগত ১০ বছর জাতীয় সংসদ ছিল সব রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে চলমান প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করা হবে। জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা : নির্বাচিত হয়ে ভবিষ্যতে দায়িত্ব পেলে আগামী পাঁচ বছরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ : জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হবে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা লক্ষ্য। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সামপ্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল : এসবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস : দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ১২.৩ ও ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে দরিদ্র্য জনসংখ্যা ২.২ কোটির নিচে নামানো হবে। বিনামূল্যে নবজাতক ও প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা : আবার ক্ষমতায় এলে একটি নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। এক বছরের নিম্নে এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষরা এ সুবিধা পাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ পর্ব-২ : ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ৫-জি চালু করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, আইওটিসহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হবে। ই-পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা হবে। শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রফতানি ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রস্তাবিত ২১তলা ভবন নির্মাণে সহায়তার প্রতিশ্রুতি : সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রস্তাবিত ২১ তলা ভবন নির্মাণের সহায়তার কথা আছে ইশতেহারে।

সর্বশেষ খবর