বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কড়া নিরাপত্তা, সারা দেশে বিজিবি

ভোটের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অগ্রিম ২৭২ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কড়া নিরাপত্তা, সারা দেশে বিজিবি

নাটোরে গতকাল বিজিবি সদস্যদের টহল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে ১ হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে বিজিবি সদস্যদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় মোতায়েন করা হচ্ছে ৫০ প্লাটুন বিজিবি। তবে কবে কোথায় কীভাবে বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে তা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিক করা হবে। গতকাল বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসিন রেজা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ১ হাজার ১৬ প্লাটুনে ঠিক কত বিজিবি সদস্য থাকছে তা বলতে পারছি না। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতিটি প্লাটুনে ১০ থেকে ৩০ জন সদস্য থাকতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে কতটি গাড়ি নিয়ে একটি প্লাটুন গঠন করা হচ্ছে তার ওপর। বিজিবি সদস্যরা এখনই নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে না। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করবেন। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ভোটের ৬ দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। ভোটের পরও দুই দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে থাকবে তারা। মোতায়েন করা সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। তাদের প্রতিটি দলের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিজিবি সদস্যদের ১২ দিনের জন্য মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২২ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন। সেই সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে ছয় দিনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর নিয়োজিত রাখা হবে তাদের। এদিকে গতকাল নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের সেনা মোতায়েনের দাবির কারণে আগাম বিজিবি নামানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ২২ ডিসেম্বর বিজিবি নামানোর কথা ছিল। ভোটের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অগ্রিম ২৭২ কোটি টাকা : ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আগাম ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচন পরিচালনা এবং বাজেট শাখা এ-সংক্রান্ত অর্থ বরাদ্দ ও মঞ্জুরির বিষয়ে সিঅ্যান্ডএজি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। আনসার ও ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডকে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা চূড়ান্ত হলে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় করা হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অর্থ বরাদ্দ বিষয়ে ২৮ নভেম্বর বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাজেট দাখিল করতে। আনসার বাহিনীকে আমরা শতভাগ টাকা অগ্রিম বরাদ্দ দেব। অন্য বাহিনীগুলোকে ৫০ ভাগ বরাদ্দ অগ্রিম দেব।’ ১২ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে পাঠানো তথ্যানুযায়ী পুলিশ বাহিনীকে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার; র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানকে (র‌্যাব) ১০ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ৮৫০; কোস্টগার্ডকে ১ কোটি ৫৬ লাখ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ৩৩ কোটি ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৪, আনসার ও ভিডিপিকে ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয়েছে ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা। এ নির্বাচনে সেনাবাহিনীও মোতায়েন ছিল, আইনশৃঙ্খলার ব্যয়ের ৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা গেছে সশস্ত্র বাহিনীর খাতে। এ ছাড়া আনসার ও ভিডিপি ৬২ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৮, পুলিশ ৪৫ কোটি ৭৩ লাখ ১ হাজার ৬২৫, কোস্টগার্ড ৮ লাখ ১২ হাজার ৫০০, বিজিবি ১৫ কোটি ২৮ লাখ ১১ হাজার ৭৫ ও র‌্যাব ২ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলায় ৭০০ কোটি টাকার খাতওয়ারি বরাদ্দ অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। আর র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা থাকেন টহলে। ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনে পরিচালনা ও নিরাপত্তায় এ ব্যয় ধরা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশই যায় নিরাপত্তা খাতে।

সর্বশেষ খবর