মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্ষোভ-বিক্ষোভ ক্যাম্পাসে, ছাত্র ধর্মঘটের ডাক

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিছিল, সমাবেশ আর বিক্ষোভে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভোটে অনিয়ম, কারচুপি, জাল ভোটে বাক্স ভর্তি, ভোট দিতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়াসহ নানা অভিযোগে সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। পুনঃ তফসিল করে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানায় সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্যরা। এ দাবিতে আজ (মঙ্গলবার) ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে নির্বাচন বর্জনকারী প্রার্থী ও সংগঠনগুলো। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিক্ষোভের সূচনা বিজ্ঞান অনুষদের শহীদুল্লাহ হলে। এরপর মোড় ঘুরে যায় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি ভোট দেওয়া ব্যালট উদ্ধারের পর। ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে জাল ভোটে বস্তা ভর্তির বিষয়টি সাধারণ ছাত্রীরা জানতে পারলে হলের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রীরা। তারা উদ্ধারকৃত জাল ভোটের ব্যালট দিয়ে উপ-উপাচার্যের গাড়ি ঢেকে দেন। রোকেয়া হলে নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান হল থেকে বের হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ ভোটচোর বলেও বিক্ষোভ করেন। তাকে তাড়া করেন ছাত্রছাত্রীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় রোকেয়া হলে নির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন ছাত্রীরা। এ ছাড়া নির্বাচনের নানা অনিয়মের অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মিছিল সমাবেশ, বাম দলীয় প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বিক্ষোভ ছিল ক্যাম্পাসে। ভোট কেন্দ্র দখল ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দুপুরে ছাত্রদলের প্রার্থীরা তাদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বিক্ষোভ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ সময় সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুপুরে ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেল বাদে সব প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেন প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। এ সময় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর জিএস প্রার্থী মো. রাশেদ খান, স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের জিএস প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। লিটন নন্দী বলেন, অবিলম্বে এ ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল করতে হবে। স্বল্পসময়ের মধ্যে নির্বাচনের পুনঃ তফসিল ঘোষণার দাবি জানান তিনি। ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরুর ওপর হামলাকারীর বিচার চান তিনি। একই দাবিতে আজ সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। প্রার্থীরা বলেন, কোনো ক্লাস-পরীক্ষা না হলেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসবেন। বিকালে সিনেট ভবনের সামনে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেন ডাকসু নির্বাচন বর্জনকারী প্রার্থীরা। দ্রুত নির্বাচনের পুনঃ তফসিল দাবি জানিয়ে ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান বলেন, এই ভোট চুরি নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হলে তা ছুড়ে ফেলব আমরা। নির্বাচন বাতিল করে পুনঃ তফসিল দাবিতে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তারা একটি আবেদনও জমা দিয়েছেন। উপাচার্যের বাসভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। শাহবাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী রাস্তা দিয়ে ডাকসু নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্য কেউ পরিচয়পত্র না দেখিয়ে গতকাল রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর