পরিবহন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল শেরেবাংলানগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের এ এডিপি অনুমোদিত হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো আমরা ২ লাখ কোটি টাকার এডিপির “ল্যান্ডমার্ক” অতিক্রম করলাম।’ এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি ও বিদেশি উৎস থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার জোগান ধরা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, মূল এডিপির বাইরে স্বায়ত্তশাসিত বা করপোরেশনের জন্য ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকার জোগান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮২ কোটি টাকা নিজস্ব উৎস ও ৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে আসবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের অনুমোদিত এডিপি গত অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ ও সংশোধিত এডিপির ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত বরাদ্দ থেকে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ২৬ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে। শিক্ষা ও ধর্ম খাতের জন্য প্রায় ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা বা ১০.৫৫ ভাগ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে প্রায় ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ জন্য। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক বরাদ্দে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ হাজার ১৪ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৫৯৯ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৯৩৬ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ৯ হাজার ২৭০ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৮ হাজার ৯২৭ কোটি, সেতু বিভাগের জন্য ৮ হাজার ৫৬১ কোটি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, গত এপ্রিল পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সংশোধিত বরাদ্দের ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা সংশোধিত এডিপির ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসের এ ব্যয় গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাস্তবায়িত হয়েছিল ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বা ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের জন্য এডিপির যে বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হলো তা দিয়ে মোট ১ হাজার ৪৭৫টি প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশনের যে নিজস্ব অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সব মিলে নতুন অর্থবছরে সর্বমোট ১ হাজার ৫৬৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।মন্ত্রী জানান, বৈঠকে আগামী অর্থবছরের এডিপির জন্য বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত মোট ১ হাজার ৪৬টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থপ্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন ২৪২টি অননুমোদিত প্রকল্প, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য ৬২টি প্রকল্প, ২০১৯ সালের জুনে ২৭২টি প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ, চলতি অর্থবছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু শেষ না হওয়ায় ৫৮টি প্রকল্প পুনঃ অন্তর্ভুক্তি এবং ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ৩৫৫টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।