শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ এমপি মঈন উদ্দীন খান বাদল, সংসদে শোক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ এমপি মঈন উদ্দীন খান বাদল, সংসদে শোক

জাসদ (আম্বিয়া) অংশের কার্যকরী সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল আর নেই (ইন্না  লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল ভোরে ভারতের বেঙ্গালুরুর দেবী শেঠি নারায়ণ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। মঈন উদ্দীন খান বাদলের ছোটভাই মুকুল খান বলেন, গত ১৮ অক্টোবর হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ভারত যান তিনি। এনজিওগ্রাম করার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। মঙ্গলবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার  ভোরে তার মৃত্যু হয়। প্রবীণ রাজনীতিবিদ মঈন উদ্দীন খান বাদল ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানের অস্ত্র নিয়ে আসা সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধে দৃঢ় ভূমিকা পালন করেন তিনি। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট মঈন উদ্দীন খান বাদল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাসদ, বাসদ হয়ে ফের জাসদে ফিরে আসেন। সর্বশেষ তিনি জাসদ (শরীফ আম্বিয়া) অংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করেন। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তার মৃত্যুতে শোক জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও  সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির, চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রমুখ।

সংসদে শোক প্রস্তাব : জাতীয় সংসদ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মঈন উদ্দীন খান বাদল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। গণমানুষের স্বার্থে বলিষ্ঠভাবে ভূমিকা রাখতেন। তার মৃত্যু আজকে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আমরা আর শুনতে পাব না।’ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল একাদশ সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে চলতি সংসদের সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদলের শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘চলার পথে অনেক আপনজনকে হারিয়েছি, অনেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। কিন্তু মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘রাজনীতির অঙ্গনে আমরা যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, এমনকি সেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন নিয়ে ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন- প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার (বাদল) সক্রিয় ভূমিকা ছিল। স্বাধীনতার পর তিনি জাসদে যোগ দেন। আমরা যখন জোট গঠন করি তখন আমাদের সঙ্গে তিনি সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলন, সংগ্রামে, রাজপথে এবং এই সংসদে তার সঙ্গে একত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধেও তার বলিষ্ঠ অবদান রয়েছে। তিনি সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। সংসদে তিনি যখন ভাষণ দিতেন প্রতিটি ভাষণই মনে একটা দাগ কেটে যেত। অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবেই তিনি কথা বলতেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র দুই দিন আগেই আমি তার খোঁজ নিয়েছি। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার স্ত্রী সব সময় আমাকে মেসেজ পাঠাতেন, খবর জানাতেন। দুই দিন আগেও আমি তার কাছ থেকে মেসেজ পাই। আজকে সকালে যখন খবরটা পেলাম এটা সত্যিই একটি বিরাট ধাক্কা লেগে গিয়েছিল।’ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন : বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শাজাহান খান, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আবুল কালাম আজাদ; সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। পরে স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণের প্রস্তাব দিলে তা গৃহীত হয়। পরে প্রয়াতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন শেষে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য বি এইচ হারুন। চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদ মুলতবি হয়। তাই স্পিকার অবশিষ্ট কার্যক্রম স্থগিত রেখে সংসদ অধিবেশন আগামী সোমবার বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর